প্রতি বছর বাজেটের সময় আয়কর নিয়ে আলাপ-আলোচনায় মেতে ওঠে দেশ। হালে খানিকটা তেমনই হইচই শুরু হয়েছে পরোক্ষ কর নিয়ে। স্বাধীনতা দিবসের বড় খবর ছিল জিএসটি ছাঁটাইয়ের ঘোষণা। সরকার এখন সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে। পরোক্ষ কর সংস্কারের জন্যে গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠী এরই মধ্যে প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ৩-৪ সেপ্টেম্বর বৈঠকে বসবে জিএসটি পরিষদ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, দিওয়ালির আগেই মিলবে অনেক পণ্যে দাম কমার সুবিধা। কোন পণ্যে কতটা কমবে, এখন সেটা জানার অপেক্ষা। প্রস্তাব, জিএসটির চারটি হার (৫, ১২, ১৮, এবং ২৮ শতাংশ) নামবে দু’টিতে (৫ ও ১৮ শতাংশ)। উঠে যাবে ১২ এবং ২৮ শতাংশ। ফলে অনেক পণ্যেই করের বোঝা কমবে। শুধু কিছু ক্ষতিকারক পণ্যে তা ৪০%।
মন্ত্রিগোষ্ঠীর শীর্ষে থাকা বিহারের উপ-মুখমন্ত্রী সম্রাট চৌধরীর মতে ২৮ শতাংশে থাকা ৯০% পণ্য নামবে ১৮ শতাংশে এবং ১২% জিএসটির আওতাভুক্ত ৯৯% নামছে ৫ শতাংশে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মতে এই সংস্কার হবে স্বচ্ছ এবং উন্নয়নমূলক।
এ বার দেখব কোন পণ্যে কতটা কর কমতে পারে। যেগুলি ২৮% থেকে ১৮ শতাংশে নামতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে— গাড়ি, দামি মোটরবাইক, এসি, ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াশার, ফ্রিজ, ৩২ ইঞ্চি থেকে বড় মাপের টিভি, ৭৫০০ টাকার বেশি দামি হোটেল ঘর, ১০০ টাকার বেশি দামের সিনেমার টিকিট, বিনোদন পার্কের টিকিট, পাঁচতারা হোটেলে ভোজন ইত্যাদি। মূল দামের উপর কর ১০% কমলে খরচ বেশ কিছুটা মাথা নামাবে। তবে উচ্চবিত্তদের ব্যবহার্য বহু বিলাসবহুল পণ্যে সেস বসে। অর্থাৎ সব কিছুর কর একই হারে না-ও কমতে পারে। যেমন দামি গাড়ি।
অন্য দিকে ১২% জিএসটির অধীন পণ্যের তালিকা বেশ লম্বা, যার বেশির ভাগই নামতে পারে ৫ শতাংশে। যেমন ঘি, মাখন, চিজ়, প্যাকেটের ফল এবং ফলের রস, প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংস, জ্যাম, জেলি, আচার ইত্যাদি খাদ্যপণ্য, কাপড়, ১০০০ টাকার বেশি দামের বস্ত্র, সৌরবিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র, ছাতা, কাঁটা চামচ ইত্যাদি, চশমা, কন্টাক্ট লেন্স, আয়ুর্বেদিক ওষুধ, ১০০১ থেকে ৭৫০০ টাকা দামের হোটেলের ঘর ইত্যাদি। এগুলির দাম কমতে পারে। সেটা হলে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তেরা উপকৃত হবেন। এই সংস্কারে অবশ্য তেমন হাত পড়ছে না ৫% এবং শূন্য শতাংশ জিএসটির বহু পণ্যে।
ধরে নেওয়া যায়, দাম কমায় বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবার বিক্রি বাড়লে উপকৃত হবে শিল্প। বাড়বে কর্মসংস্থান। তবে পেট্রোপণ্য এর আওতার বাইরে। অর্থাৎ পেট্রল ও ডিজ়েল জিএসটিতে ঢুকছে না এবং সেগুলির দামও কমছে না। কর কমলে কেন্দ্রের আয় কমবে। যদিও বিক্রি বাড়লে তার খানিকটা পুষিয়ে যেতে পারে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে মোট জিএসটি আদায় হয়েছে ৬.২২ লক্ষ কোটি টাকা। গড়ে মাসে ২.০৭ লক্ষ কোটি। রাজস্ব আদায় কমলে আয় কমবে রাজ্যগুলিরও।
সিমেন্টে কর বসে ২৮%। তা ১৮ শতাংশে নামলে সুবিধা হবে বাড়ির ক্রেতা এবং নির্মাণ শিল্পের। শোনা যাচ্ছে বিমার প্রিমিয়ামে কর ১৮% থেকে কমিয়ে ৫% অথবা ০% করা হতে পারে, যে দাবি বহু দিনের। এটা হলে উপকৃত হবেন বহু মানুষ। স্বাস্থ্য বিমা এবং জীবন বিমার টার্ম পলিসিতে এখন কর ১৮%। এনডাওমেন্ট পলিসিতে প্রথম বছরে ৪.৫% এবং পরের বছরে ২.২৫%। এক প্রিমিয়ামের প্রকল্পে ১.৮%। দেখা যাক শেষমেষ কোন পণ্যে কতটা কর কমে।
জিএসটির সংস্কারে লাভবান হবে মূলত বস্ত্র, বিমা, জুতো, সিমেন্ট, প্যাকেটের খাদ্যপণ্য, পর্যটন এবং বহু ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প। এর সুবাদে আমেরিকায় চড়া শুল্ক বসার কারণে যে সব শিল্পের রফতানি কমবে, তাদের অনেক পণ্য ভারতেই বাজার পাবে। সরকারকে দেখতে হবে কম করের সুবিধা যেন ক্রেতাদের কাছে পৌঁছয়। অর্থাৎ পাশাপাশি পণ্যের দাম যেন বাড়ানো না হয়।
(ব্যক্তিগত মতামত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)