E-Paper

চড়া দামের খাদ্যপণ্য ঠেলে তুলল খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকে

শুধু আনাজেরই দাম বেড়েছে ২৯.৩২% হারে, ডালের ১৬.০৭%। দেশবাসীর প্রধান খাবার যেগুলি, চাল-গমের মতো সেই সব খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছে গিয়েছে ৮.৭৫ শতাংশে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৫:৫৪

—প্রতীকী চিত্র।

বাজারে আগুন দামের আনাজ ফের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির সার্বিক হারকে ৫ শতাংশের উপরে তুলে দিল। শুক্রবার কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে প্রকাশ, গত মাসে তা হয়েছে ৫.০৮%। চার মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি। এক বছর আগের হার ছিল ৪.৮৭% আর গত মে মাসে ৪.৭৫%। জুনে গোটা দেশের উদ্বেগ বাড়িয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ৯% ছাড়িয়ে গিয়েছে। শুধু আনাজেরই দাম বেড়েছে ২৯.৩২% হারে, ডালের ১৬.০৭%। দেশবাসীর প্রধান খাবার যেগুলি, চাল-গমের মতো সেই সব খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছে গিয়েছে ৮.৭৫ শতাংশে। একমাত্র ভোজ্যতেল এবং চর্বি বাদে দাম বেড়েছে প্রায় সব রকম খাবারেরই।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দুর্ভোগ যে স্বল্প এবং সাধারণ রোজগেরে মানুষের পিছু ছাড়েনি সেটাই ফের স্পষ্ট করল সরকারি তথ্য। সাধারণ ডাল-ভাতের খরচ কুলিয়ে ওঠাই ক্রমশ কঠিন হচ্ছে একাংশের পক্ষে।

এরই মধ্যে অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে দেশের শিল্পোৎপাদন। এ দিনই প্রকাশ পাওয়া সরকারি পরিসংখ্যান জানিয়েছে, গত মে মাসে শিল্প বৃদ্ধির হার ৫.৯% ছুঁয়ে সাত মাসে সর্বোচ্চ হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ এবং খনন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধিই এর কারণ। তবে কর্মসংস্থান বাড়ানোর অন্যতম একটি জায়গা যে কল-কারখানার উৎপাদন, তা আগের বছরের তুলনায় এ বার খানিকটা শ্লথ হয়েছে। ছিল ৬.৩%, হয়েছে ৪.৬%। ফলে মূলধনী পণ্যের বৃদ্ধিও ধাক্কা খেয়েছে।

তবে বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির ফের ঊর্ধ্বমুখী হারে চোখ রেখে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানোর সম্ভাবনা যে আরও পিছিয়ে যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সব থেকে বেশি চিন্তার। অনাবৃষ্টির ফলে ফলন মার খাওয়ায় জোগান কমে গিয়েছে বাজারে। তাই দাম চড়েছে। এই হার কমাতে না পারলে কেউ স্বস্তি পাবেন না।’’ সার্বিক ভাবে যা পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে আরবিআই সুদ কমাতে আরও বেশ কিছুটা সময় নেবে বলেই মনে করছেন তিনি।

আর এক অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘তাপপ্রবাহের জের এখনও চলছে। এ বার বর্ষা কী রকম হয় তার উপর নির্ভর করবে মূল্যবৃদ্ধির গতি।’’ আবহাওয়া দফতর অবশ্য স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। দুই অর্থনীতিবিদই বলছেন, খরিফের ফলনে চোখ রাখতে হবে। নজরদারি চালাতে হবে মজুতের উপর।

এ বছর গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ যে খাদ্যপণ্যের দামকে বাড়িয়ে দিয়ে ফের খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে ধাক্কা দিতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিলই। বাস্তবে তা মিলে যাওয়ায় প্রমাদ গুনছে সাধারণ মানুষ। রাজেন্দ্র পরামানিক বলছেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই খাদ্যপণ্যের দাম মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। এই দফায় তার কারণ তাপপ্রবাহ। এমন চড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব দেশের আর্থিক ক্ষেত্রেও পড়বে। বিভিন্ন মহল সুদের হার ছাঁটাইয়ের দাবি তুললেও, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে সেই রাস্তায় হাঁটা সম্ভব হবে না। যা লগ্নিতে টান ধরাবে। আখেরে ক্ষতি হবে দেশের অর্থনীতির।’’

সুদ না কমলে শিল্পের লগ্নি বাড়বে না, আক্ষেপ একাংশের। তাঁরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধি মোদী সরকারের গলার কাঁটা হল তৃতীয় দফাতেও। কী ভাবে সেই কাঁটা তোলা হচ্ছে, তার উপরে নির্ভর করবে অর্থনীতির দিশা। বিরোধী শিবির এ নিয়ে ক্রমাগত দুষছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

market price Price Hike

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy