Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
করোনার জেরে কোথাও খুলছে সুযোগ, কোথাও ধাক্কা জোরালো
Coronavirus

বিপাকে চিন, বিকল্প বাজার হবে ভারত!  

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২০ ০৪:২৪
Share: Save:

চিন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধে আশার যে ফুলকি উঁকি দিয়েছিল, সেই প্রশ্ন ফের ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে করোনার কামড়ে!

জিজ্ঞাসা, এই জোড়া ধাক্কায় বিশ্ব বাণিজ্যে চিনের রমরমা কমলে তাদের হাতছাড়া হওয়া বাজার ও বিদেশি লগ্নির বড় অংশ কি পকেটে পুরতে পারবে ভারত? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সেই সম্ভাবনা দূর অস্ত্। কারণ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে যে ভাবে ও যতটা তৈরি থাকা জরুরি, তার থেকে বহু দূরে ভারত। আর শিল্প বলছে, বাণিজ্যে প্রতাপশালী পড়শি মুলুকের ঘরে এই বিপদ এ দেশের সামনে সম্ভাবনার দরজা ফাঁক করলেও, তার ফায়দা তুলতে সব তাস ঠিক ফেলতে হবে দিল্লিকে।

দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক উদয়ভানু সিংহের কথায়, ‘‘বিশ্ব বাণিজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী বেসামাল হলে স্বল্প মেয়াদে ফায়দা তোলা সম্ভব তখনই, যখন সঙ্গে সঙ্গে তার হাতছাড়া হওয়া বাজার দখলের সামর্থ্য থাকে। কিংবা পরিকাঠামো মজুত থাকে ওই দেশ থেকে সরে আসা লগ্নির বিকল্প গন্তব্য হয়ে ওঠার।’’ কিন্তু দু’ক্ষেত্রেই ভারত কতটা তৈরি, তাতে সংশয় যথেষ্ট। কারণ, ওষুধ, রাসায়নিকের মতো শিল্পে উৎপাদনের জন্য ভারত চিনের উপরে নির্ভরশীল। ফলে সেগুলিতে চিনের সঙ্কট উল্টে বাড়তি সমস্যা তৈরি করবে। তা ছাড়া, একলপ্তে সস্তায় বিপুল পণ্য উৎপাদনের যে পরিকাঠামোর জন্য চিনের এত কদর, এ দেশে তার বিকল্প কতটা মজুত, তা নিয়েও সংশয় আছে।

একমত দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতিও। দু’জনেই বলছেন, ‘‘দীর্ঘ মেয়াদে চিনের সঙ্গে টক্কর দিতে কম খরচে ও উন্নত প্রযুক্তিতে বিপুল পণ্য তৈরি করতে হবে ভারতকে। যা বাণিজ্য-যুদ্ধ বা করোনা-হানার মতো ঘটনা দেখে রাতারাতি খাড়া করা শক্ত। বরং সেই প্রতিযোগিতায় নামতে হলে, পরিকল্পনা ছকে উৎপাদন ও রফতানির ভাল পরিকাঠামো গড়তে হবে দেশে।’’ দিব্যেন্দুর মতে, জমি-জট থেকে লাল ফিতের ফাঁস— নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে এ দেশে যে সময় লাগে, তাতে উৎপাদন খরচ বাড়ে। অথচ দামের প্রতিযোগিতায় যুঝতে পারা রফতানিতে সাফল্যের বড় শর্ত!

তা ছাড়া, যে সংস্থার কাছে কম খরচে ও উন্নত প্রযুক্তিতে ভাল পণ্য তৈরির চাবিকাঠি থাকে, শুধু সেটুকু তৈরিতেই মন দেয় তারা। যেমন যন্ত্রাংশ। যা জুড়ে হয় পুরো পণ্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, রফতানিতে কল্কে পাওয়ার শর্ত এই ‘গ্লোবাল ভ্যালু চেনের’ অংশ হওয়া। দিব্যেন্দুর মতে, বস্ত্র শিল্পে বাংলাদেশ তা পেরেছে। বৈদ্যুতিন পণ্যে সফল মালয়েশিয়ার মতো দেশ। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট শিল্পে ওই চেনের অঙ্গ হতে পারেনি ভারত। হাত মেলাতে পারেনি আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতেও। এত খামতি ঢেকে রাতারাতি চিনের বিকল্প হওয়া শক্ত।

বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল যে ভারত কুড়োতে পারেনি, তা স্পষ্ট পণ্য রফতানির হিসেবে (সঙ্গের সারণিতে)। তবে ছোট শিল্পের সংগঠন ফিসমে-র অনিল ভরদ্বাজের যুক্তি, ‘‘বাণিজ্য-যুদ্ধে যে পণ্যগুলি রফতানিতে চিন ধাক্কা খেয়েছিল, সেগুলি দখলের শর্ত ছিল কম খরচে উৎপাদন। কিন্তু এ বার খালি জায়গা দখলে দক্ষ কর্মী, উন্নত প্রযুক্তি ইত্যাদি জরুরি। তাই সেই ফাঁক ভরাটের সুযোগ আছে ভারতের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus India China Trade War USA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE