বিশ্ব বাজারে ফের নামছে অশোধিত তেলের দাম। ব্রেন্ট ক্রুড রয়েছে ব্যারেলে ৬৪ ডলারের আশেপাশে। ডব্লিউটিআই ৬০ ডলারের কাছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, দেশে এর প্রভাব পড়বে কবে? মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করে কবে কিছুটা অন্তত কমানো হবে পেট্রল, ডিজ়েলের দর? সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, ইতিপূর্বে বেশ কয়েক বার বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল নেমেছে। সাম্প্রতিক কালে একবার ৬০ ডলারের নীচে নেমে গিয়েছিল ব্রেন্ট ক্রুড। আরও তলিয়ে যায় ডব্লিউটিআই। কিন্তু দেশের জ্বালানিতে তেমন সুরাহা পাননি আমজনতা। বিশেষজ্ঞেরা মনে করাচ্ছেন, বিশ্ব বাজারে দাম কমার সময় কেন্দ্র বলেছিল, আন্তর্জাতিক দর বেশি থাকাকালীন দেশে তা না বাড়িয়ে যে লোকসান গুনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি, তা উসুল করতেই দাম কমছে না। শেষ বার পেট্রল-ডিজ়েল লিটারে ২ টাকা করে কমে লোকসভা ভোটের আগে, গত বছর ১৫ মার্চ।
বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের ব্যাঙ্কিং এবং অর্থনীতি বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান স্মরজিৎ মিত্রের মতে, এখন দেশে তেলের দাম কমার পথে বাধা ডলারের সাপেক্ষে টাকার পড়তি দাম। যা আমদানির খরচ বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘যতটা দাম কমেছে, সেটা টাকার টানা পতনের কারণে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্র অবশ্য দামের ফারাক বজায় রাখবে নিজের সুবিধার জন্য। এখনই সাধারণ মানুষের স্বস্তি পাওয়ার মতো কোনও খবর আসবে বলে মনে হয় না।’’
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরেই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্যারেলে পৌঁছেছিল ১৪০ ডলারের কাছে। ফলে দেশেও পেট্রলের লিটার পেরোয় ১০০ টাকা। ডিজ়েলও হাঁটা দেয় সেই দিকে। পরে বিশ্ব বাজারের দাম অনেক নামলেও দেশের বহু জায়গায় পেট্রল এখনও শতাধিক। যথেষ্ট চড়া ডিজ়েল। যেমন, কলকাতায় আইওসির পাম্পে পেট্রল কিনতে খরচ হয় ১০৫.৪১ টাকা, ডিজ়েলের লিটার ৯২.০২ টাকা।
অর্থনীতিবিদ সূপর্ণ মৈত্রর দাবি, “বিশ্ব বাজারের দামের প্রভাব থাকে বটে। তবে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের খুচরো দাম নির্ধারণে আরও কিছু বিষয় জড়িত— যেমন, ডলার-টাকার বিনিময় হার, কর ও শোধনাগারের খরচ। তাই সাধারণত বিশ্ব বাজারে দাম বদলের পরে কিছুটা সময় নিয়ে এ সব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। তার পরে তার প্রভাব দেশীয় বাজারে দেখা যায়।’’ সূত্রের দাবি, এই সব কথা চলাকালীন ফের বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়লে গোটাটাই পণ্ড হয়। বিরোধী শিবির-সহ গ্রাহকদের একাংশের কটাক্ষ, অতীতে অশোধিত তেলের দর বৃদ্ধির সময় বা আন্তর্জাতিক দাম কম থাকার সুযোগে কেন্দ্রের পেট্রল-ডিজ়েলে শুল্ক বৃদ্ধির সময় গোটাটা কার্যকর হয়েছে দ্রুত। কিন্তু সেই সক্রিয় ভাব দাম কমানোর ক্ষেত্রে চোখে পড়ে না। শুধু ভোটের মরসুমে আশার আলো দেখা যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)