গত ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী বলেছিলেন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল আরও কিছু দিন ব্যারেল পিছু ৭০ ডলারের নীচে থাকলে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেই বার্তার পরে তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব বাজারে আরও কমে ৬০-৬১ ডলারে নেমেছে ব্রেন্ট ক্রুডের দর। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রয়েছে ৬০-৬৫ ডলার। ফলে জল্পনা বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে প্রত্যাশা। প্রশ্ন উঠছে, মন্ত্রীর কথা সত্যি বলে ধরলে এ মাসেই কি দাম কমার সম্ভাবনা? তবে শেষ পর্যন্ত তা আদৌ হবে কি না, সংশয়ী একাংশ।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, অশোধিত তেল সস্তা হওয়ায় মার্চ থেকে টানা তিন বার বিমান জ্বালানি এটিএফের দাম কমেছে। রাজকোষ ভরতে সরকারও পেট্রল-ডিজ়েলের লিটারে ২ টাকা করে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছে। ব্রাত্য শুধু সেগুলির দাম কমানোর বিষয়টি। অথচ সেটা হলে যাতায়াতের খরচ কমে সাধারণ মানুষের। পরিবহণের খরচ কমায় পণ্যের দাম কমে।
পুরীর অবশ্য দাবি ছিল, শোধনের খরচ খাতে প্রায় ৪১,৩৮৮ কোটি টাকা ক্ষতি বইছে তেল সংস্থাগুলি। যা কমানোর চেষ্টা চলছে। ভারত মোটামুটি ৪৫ দিনের মজুত হাতে রাখে। বর্তমানে যার গড় দাম প্রায় ৭৫ ডলার। আরও ক’দিন কম দাম থাকলে দেশে তেলের দর বদলের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। মন্ত্রীর আশাই সত্যি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রেন্ট ক্রুড ৬০-৬৫ ডলারে।
বিরোধী শিবির-সহ সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, এপ্রিলে রান্নার গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিশ্ব বাজারে প্রোপেইন ও বুটেনের দাম বেশি থাকায়। এর আগে একই যুক্তিতে দেশে তেল দামি হয়েছে। উল্টোটা হলে চটজলদি কমেনি। যে কারণে অনেক জায়গায় পেট্রল এখনও ১০০ টাকার বেশি। চড়ে ডিজ়েলও। তাঁদের প্রশ্ন, বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে এই সব সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে, দাম কম থাকার প্রভাব পড়ছে না কেন? অথচ তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এতটা সস্তা হয়নি অশোধিত তেল।
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার যদি গ্যাসের ক্ষেত্রে বিশ্ব বাজারের যুক্তি দিয়ে দাম বাড়ায়, তা হলে বিশ্ব বাজারে ধারাবাহিক ভাবে কম দাম থাকায় পেট্রোপণ্যের দামও কমানো যেত। কিন্তু তা হয়নি।’’ তবু ভরসা মন্ত্রীর বার্তা। সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)