Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নাগাড়ে নিম্নমুখী অর্থনীতির বহু হিসেব

লগ্নিকারী সাবধান! বাজার কিন্তু উঁচুতে

শুল্ক যুদ্ধে ইতি টানতে চিন-মার্কিন আলোচনা ও তা সফল হওয়ার ইঙ্গিত মেলায় বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি এখন সাময়িক মন্দের ভাল। ভারতে আবার ঢুকছে বিদেশি লগ্নি। অন্যত্র সুদ কমায়, বহু মানুষ লগ্নি করছেন মিউচুয়াল ফান্ডে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

খারাপ খবর আসছে নাগাড়ে। থামার লক্ষণ নেই। তবুও কেন্দ্র মানতে নারাজ অর্থনীতির স্বাস্থ্য খারাপ। অথচ লগ্নিতে ভাটা, কারখানায় উৎপাদন কমা, বাড়ি, গাড়ি, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন পণ্যের ঝিমিয়ে থাকা চাহিদা, নানা সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই ও স্বেচ্ছাবসর, একের পর এক মূল্যায়ন ও আর্থিক সংস্থার বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো, রফতানিতে পতন— এত সব প্রতিকূল খবর পাওয়ার পরে কি বলা যায় অর্থনীতি ভাল আছে? সেনসেক্স, নিফ্‌টির মতো সূচকের অবশ্য তাতে তাপ-উত্তাপ নেই তেমন। মাঝে-মধ্যে পড়লেও, সেগুলির পা এখন অনেক উঁচুতে। ফলে বলতেই হচ্ছে, শেয়ার বাজার সব সময় অর্থনীতির ঠিক প্রতিচ্ছবি দেখায় না। অন্তত এখন দেখাচ্ছে না। তাই এই লগ্নিতে ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। সাধারণ লগ্নিকারীদের এ কথা মনে রেখেই পুঁজির ঝুলি খুলতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সতর্ক হয়ে।

শুল্ক যুদ্ধে ইতি টানতে চিন-মার্কিন আলোচনা ও তা সফল হওয়ার ইঙ্গিত মেলায় বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি এখন সাময়িক মন্দের ভাল। ভারতে আবার ঢুকছে বিদেশি লগ্নি। অন্যত্র সুদ কমায়, বহু মানুষ লগ্নি করছেন মিউচুয়াল ফান্ডে। সেই সূত্রে মোটা টাকা ঢুকছে বাজারে। দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এতটা নড়বড় হওয়া সত্ত্বেও সূচক উপরে থাকার অন্যতম কারণ এটিও।

সম্প্রতি বেশ কিছু সংস্থা চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মোটা নিট মুনাফার হিসেব প্রকাশ করেছে। তবে তাতেও খুশি হওয়ার কারণ আছে বলে মনে হয় না। মনে করা হচ্ছে, এর অন্যতম কারণ লাভের উপরে সরকারের কর্পোরেট কর ছাঁটাই। বিক্রি ও ব্যবসা বাড়ার জেরে নয়।

অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৬২%। যা ১৬ মাসে সবচেয়ে বেশি। খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তা ৭.৮৯%। এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি এবং অন্য দিকে ব্যাঙ্ক জমায় সুদের পতন রক্তচাপ বাড়াচ্ছে সাধারণ রোজগেরে মানুষের।

আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থার পূর্বাভাস, এ বছর ভারতে বৃদ্ধি অনেকটাই কমবে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ় সেই পূর্বাভাস কমিয়ে ৫.৬% করেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির ইঙ্গিত ৫ শতাংশেরও নীচে। স্টেট ব্যাঙ্ক ও এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখার অনুমান, অর্থবর্ষে বৃদ্ধি দাঁড়াবে যথাক্রমে ৫% ও ৫.৮%। গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ছিল ৬.৮১%। অর্থাৎ এ বার জাতীয় উৎপাদন কমতে পারে কমপক্ষে ১%। বহু দেশের তুলনায় ৫.৮% বৃদ্ধি ভাল হলেও জাতীয় উৎপাদনে ১% পতনের প্রতিক্রিয়া দেশের মধ্যে বিরাট। আশু চাহিদা ও উৎপাদন বাড়বে, এমন আশা এখনই করা যাচ্ছে না। চাপে টাকাও। ফলে গত সপ্তাহে এক সময়ে ডলারের দাম বেড়ে ছুঁয়েছিল ৭২ টাকা।

অবস্থা যা, তাতে সূচকের এত উপরে থাকার কথা নয়। কিন্তু আছে। অর্থাৎ এই উচ্চতায় ঝুঁকি আছে। উঁচু পাহাড়ে চড়তে গেলে যেমন ঝুঁকি থাকে, তেমনই ঝুঁকি আছে সেনসেক্সের ৪০,০০০ পেরনো দৌড়ে। ফলে এখানে পা রাখতে হবে সাবধানে। ঝুঁকি বেশি মনে হলে কিছুটা নেমে আসা ভাল।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy BSE Mutual Fund
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE