বিভিন্ন দিক থেকে অনুকূল বাতাস বইছে। কিন্তু বাজার স্থিতিশীল হতে পারছে না। সর্বোচ্চ জায়গার কাছাকাছি পৌঁছে ফের নেমে এসেছে সেনসেক্স, নিফ্টি। যে দু’টি প্রতিকূল শর্ত এর কারণ তা হল, ভারতীয় পণ্যে আমেরিকার চড়া শুল্ক (৫০%) এবং ভারতীয় বাজারে চুপসে যাওয়া বিদেশি লগ্নি। এগুলি কিছুটা অনুকূলে এলেই সূচক ফের নজির গড়তে পারে।
দেশের অর্থনীতি এখন মজবুত। সেপ্টেম্বরে জিএসটি সংস্কারের পরে বহু পণ্যের কর কমায় দাম কমেছে এবং চাহিদা বেড়েছে। আশার আলো দেখছে অনেকগুলি শিল্প। উৎসবের মরসুমের নজিরবিহীন ভাবে ৪২ দিনে প্রায় ৪১ লক্ষ চার চাকা এবং দু’চাকার গাড়ি বিক্রি হয়েছে। যার সুফল পাবে অনুসারী শিল্পও। নিয়ন্ত্রণে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। দেশ ভাল বর্ষা পেয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যের জোগান বাড়তে পারে। উজ্জীবিত হতে পারে গ্রামীণ অর্থনীতি। সেখানে বাড়বে শিল্পপণ্যের চাহিদা। কৃষি উৎপাদন ভাল হলে খাদ্যপণ্যের দামও মানুষের নাগালে থাকে। মূল্যবৃদ্ধির হার মাথা নামানোয় এরই মধ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছেঁটেছে, যা সাধারণ ঋণগ্রহীতা এবং শিল্পের জন্য ভাল। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুদ আরও কমবে। জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলও মোটের উপর মন্দ হয়নি। স্টেট ব্যাঙ্কের নিট লাভ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রায় ৬৮০০ কোটিতে পৌঁছেছে ভারতী এয়ারটেলের। মারুতি সুজ়ুকি ঘরে তুলেছে ৩২৯৩ কোটি টাকার মুনাফা।
অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকায় শেয়ার ও ফান্ডে লগ্নি বাড়ছে। বিদেশি লগ্নি ক্ষীণ হলেও, দেশীয় সংস্থার নিয়মিত পুঁজি বাজারে ধস নামতে দিচ্ছে না। জোয়ার চলছে বিভিন্ন সংস্থার প্রথম শেয়ার ছাড়ার (আইপিও/প্রথম ইসু) বাজারেও। গত মাসে টাটা ক্যাপিটাল এবং এলজি ইলেকট্রনিক্সের পরে গত সপ্তাহে ভাল সাড়া পেয়েছে লেন্সকার্ট এবং বিলিয়নস ব্রেনস (গ্রোও)-এর আইপিও। চলছে বা আসছে আরও বেশ কয়েকটি।
সংস্থার আর্থিক ফল ভাল হতে থাকলে সেটির শেয়ার পিছু আয় (ইপিএস) বাড়বে, কমবে দাম-আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও)। তখন হয়তো ভারতের শেয়ার বাজারে ফিরবে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি। শুল্ক নিয়ে ভারত-আমেরিকার সমঝোতা হলেও বাজার ফের বাঁধন ভেঙে এগোবে। এই লক্ষ্যে এ দেশ ইতিমধ্যেই রুশ তেল আমদানি কমাতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি, বাড়াচ্ছে আমেরিকা থেকে।
চলতি সপ্তাহটা বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অক্টোবরের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার জানা যাবে। তাতে বোঝা যাবে সুদ আরও কমবে কি না। ১৪ নভেম্বর বিহারে ভোট গণনা। এ সপ্তাহেই শেষ হবে সংস্থার ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশ। এই সব কিছুর প্রভাব পড়বে বাজারে। অর্থনীতি সম্পর্কে ভাল ইঙ্গিত পেয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়াচ্ছে। আগের ৬.৩% বা ৬.৫ শতাংশের পরিবর্তে চলতি অর্থবর্ষে তা ৬.৮% হবে বলছে। এই সব মাথায় রাখতে হবে লগ্নিকারীকে। ছোট থেকে মাঝারি পতনে কিছু কিছু ভাল শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নি করা যায়। তা হলে বড় মেয়াদে ভাল রিটার্ন আশা করা যেতে পারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)