E-Paper

কমছে বাড়ি-গাড়ির বিক্রি, ঝিমুনি চাহিদাতেও, বাজারের চোখ সরকারের আরও পদক্ষেপের দিকে

জুনে জিএসটি সংগ্রহ (১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.২% বাড়লেও, মে-র থেকে (২.০১ লক্ষ কোটি) কম।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:০১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবর্ষ। বার্ষিক করবিহীন আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। একই সঙ্গে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও তিন দফায় ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। যাতে বাড়ি-গাড়ির ঋণের কিস্তি কমে। অথচ সরকারি তরফে এমন নানাবিধ চেষ্টা সত্ত্বেও দেশের বাজারে পণ্যের চাহিদা তেমন বাড়ছে না। বিক্রিবাটায় ঝিমুনি ভাব। বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা উল্টে কমেছে। যা অর্থনীতির পক্ষে স্বস্তির খবর নয়।

জুনে জিএসটি সংগ্রহ (১.৮৪ লক্ষ কোটি টাকা) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.২% বাড়লেও, মে-র থেকে (২.০১ লক্ষ কোটি) কম। যা ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা ভাটার ইঙ্গিত। গত মাসে যাত্রিবাহী গাড়ির বিক্রি ৬.৪% কমেছে। ৩,৪২,১৭৪ থেকে হয়েছে ৩,২০,২৭৭। এপ্রিল-জুনে কলকাতা-সহ দেশের সাতটি বড় শহরে বাড়ি বিক্রি কমেছে ২০%। ১,২০,৩৩৫ থেকে এক ধাক্কায় নেমেছে ৯৬,২৮৫-তে। এই দুই শিল্পে চাহিদা কমা কিন্তু উদ্বেগের। কারণ, তাতে চাপ বাড়ে অনুসারী শিল্পগুলির উপরেও। তা ছাড়া সুদ কমা সত্ত্বেও ঋণের চাহিদায় ভাটা ভাল লক্ষণ নয়।

অথচ চাহিদা বাড়াতে সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্র ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বেশ কিছুগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ মধ্যবিত্তকে বড় করছাড় দেওয়া হয়েছে বাজেটে। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করার পাশাপাশি, করের দায় কমেছে ২৪ লক্ষ পর্যন্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের হাতে ১ লক্ষ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা। আশা ছিল, সেই টাকা তাঁরা কেনাকাটায় খরচ করবেন। আর্থিক কর্মকাণ্ডের গতি বাড়বে। অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে কিন্তু তেমন লক্ষণ দেখা যায়নি। শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ কমানোয় ঋণের কিস্তি কমেছে বটে। কিন্তু বাড়ি-গাড়ির চাহিদা নিম্নমুখী। ঋণের কিস্তি কমলেও মানুষের হাতে বেশি নগদ থাকার কথা। তা সত্ত্বেও চাহিদা বাড়েনি। এর একটা কারণ হতে পারে যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা ও বিশ্বজোড়া অনিশ্চয়তা। নগদ থাকলেও এই অবস্থায় হাত খুলে তা খরচ করার ঝুঁকি নিতে পারছেন না। ধরে রাখছেন আপৎকালীন প্রয়োজনের কথা ভেবে। যে কারণে ব্যাঙ্ক জমায় সুদ কমলেও আমানতে তেমন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। অনেকে দায়ী করছেন আয়ের অসম বণ্টনকেও। ভারতের মোট জাতীয় আয় উঁচু হলেও তার বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে উপরতলায়। এমনকি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ীও এই অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন।

এই অবস্থায় প্রত্যক্ষ করে ছাড় দেওয়ার পরে, পরোক্ষ করে মানুষকে সুবিধা দিতে জিএসটি কাঠামো বদলের কথা ভাবা হচ্ছে। ভাবা হচ্ছে ১২ শতাংশের স্তরকে বিলোপ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যকে ৫% করের বন্ধনীতে নিয়ে আসার কথা। তালিকায় থাকতে পারে টুথপেস্ট, ছাতা, সেলাই মেশিন, প্রেশার কুকার, বাসনপত্র, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি, গিজার, ছোট ওয়াশিং মেশিন, সাইকেল, তৈরি পোশাক, ৫০০-১০০০ টাকার জুতো, টিকা, সেরামিক টালি, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। প্রস্তাব কার্যকর হলে জিএসটি সংগ্রহ কমতে পারে ৪০,০০০-৫০,০০০ কোটি টাকা। তবে বিক্রি বাড়লে ফারাক পুষিয়ে যেতে পারে।

জিএসটি পরিষদের পরের বৈঠকে কথা হতে পারে বিমার প্রিমিয়ামে কর ১৮% থেকে কমানোর প্রস্তাব নিয়ে। প্রত্যন্ত জায়গায় বিমার প্রসারে সরকার এক প্রকল্পে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। জীবন ও স্বাস্থ্য বিমার কর ৫ শতাংশে নামানো না হলে কিন্তু এই প্রকল্পেও বিশেষ কাজ হবে না।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Automobile Industry Real Estate Market

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy