ইরান থেকে অশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করা নিয়ে মার্কিন রক্তচক্ষুর সামনে প্রবল দোটানায় কেন্দ্র। সরকারি ভাবে তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের দাবি, কোনও চাপের সামনে নতি স্বীকার করবে না দিল্লি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই তেল কেনা বন্ধ হলেও জোগানে যাতে টান না পড়ে, তার জন্য ইতিমধ্যেই রীতিমতো খোঁজখবর শুরু করেছে মোদী সরকার। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ পৌঁছেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির কাছেও।
ভারত-সহ সমস্ত দেশকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে ইরান থেকে তেল কেনা বন্ধ করার কথা আগে থেকেই বলছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হালে তা নিয়ে চাপ বাড়াতে শুরু করেছে ওয়াশিংটন। বুধবার ভারত সফরে এসে রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মনে করিয়েছেন সেই কথা। এই অবস্থায় দোটানায় দিল্লি।
এই সিদ্ধান্ত তাদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই দড়ির উপরে হাঁটা। কারণ, এক দিকে ট্রাম্পের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা মানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ঘাড়ে চাপার আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে ধাক্কা খেতে পারে সে দেশে রফতানি, সঙ্গে ভারতের অর্থনীতিও। মেঘ ঘনাতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে। কিন্তু তেমনই আবার ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধের ঝক্কিও কম নয়।
এমনিতে চিনের পরেই ইরানের তেলের সব থেকে বড় ক্রেতা ভারত। এ দেশে মোট তেল আমদানির প্রায় ১৩% আসে পশ্চিম এশিয়ার ওই দেশ থেকে। তার উপর দীর্ঘ দিন ধরে তেল জোগানে ভারতের বিশ্বস্ত সহযোগী তারা। যে কারণে এর আগের দফায় আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিদেশি মুদ্রায় টাকা মেটানো নিয়ে বিস্তর অসুবিধা সত্ত্বেও ইরান থেকে আমদানি বন্ধ করেনি ভারত।
তার উপর এখন বিশ্ব বাজারে তেলের দরে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বহাল। তেল রফতানিকারী দেশের সংগঠন ওপেক উৎপাদন বাড়ানোর কথা বললেও, তা সামান্য। বাড়তি বোঝা ডলারের দর বৃদ্ধি। কারণ, তাতে তেল কেনার খরচ আরও বাড়ার আশঙ্কা। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সে জন্যই এ দিন ইরানের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ দিনের সভ্যতাগত যোগের কথা তুলে ধরে তেহরানকে তুষ্ট রাখতে চেয়েছে সাউথ ব্লক। সে দেশে নির্মীয়মান চাবাহার বন্দরও ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সব কথা ভেবেও মার্কিন হুমকির দরুন তেল আমদানির বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে দিল্লিকে। এ দিনও হ্যালি বলেন, ‘‘ইরানে স্বৈরতন্ত্র চলছে। হচ্ছে দেশের মানুষের উপরই অত্যাচার। সন্ত্রাসবাদে মদত দেয় তারা। সারা বিশ্ব ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে একজোট।’’
এক দিকে তাই দলছুট হওয়ার ভয়। অন্য দিকে, আশঙ্কা তেল জোগানের বিশ্বস্ত বন্ধুকে খোয়ানোর। ভোট-বছরে উভয় সঙ্কটে মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy