বিভিন্ন রকম শর্ত কিংবা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিদেশি সংস্থার উপরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা আমেরিকার নতুন নয়। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চিনা সংস্থা টিকটকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে উদ্যোগী হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, আমেরিকার এই ধরনের পদক্ষেপের মোকাবিলা করতে চিন ইদানীং সেই ওয়াশিংটনেরই বিভিন্ন নীতিই অনুকরণ করে চলেছে। হরেক শর্ত চাপাচ্ছে বিদেশি সংস্থার উপরে। বাদ পড়ছে না আমেরিকার সংস্থাও।
আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন নয়। ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাত ধরেই সেই শুল্ক ও পাল্টা শুল্কের লড়াই শুরু হয়েছিল। এই দফাতেও চিনের পণ্যে ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। হুঁশিয়ারি দিয়েছে ১০০ শতাংশের। পাল্টা হিসেবে চিনের মাটির নীচ থেকে উত্তোলন হওয়া বিভিন্ন বিরল খনিজের উপরে একাধিক শর্ত চাপিয়েছে বেজিং। বৈদ্যুতিক গাড়ি, তার যন্ত্রাংশ কিংবা মোবাইল ফোন-সহ কোনও বৈদ্যুতিন পণ্যে যদি এক কণাও চিনের বিরল খনিজ থাকে, তবে তা রফতানি করার আগে চিনা সরকারের সম্মতি নিতে হবে বিদেশি সংস্থাগুলিকে। অর্থাৎ, দক্ষিণ কোরিয়া যদি অস্ট্রেলিয়ায় মোবাইল ফোন রফতানি করতে চায় এবং সেই পণ্যে যদি চিনের বিরল খনিজ থাকে, তবে বেজিংয়ের অনুমোদন লাগবে। আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের বক্তব্য, ‘‘এই বিধির মাধ্যমে চিন কার্যত সারা বিশ্বের অর্থনীতির উপরে নিয়ন্ত্রণ কায়েমের চেষ্টা করছে।’’
এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের। সারা বিশ্ব এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে। যদি কিছু সুহারা হয়। তাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে। এরই মধ্যে গ্রিয়ার জানিয়েছেন, ২০২০ সালে যে চুক্তি হয়েছিল তা চিন ঠিক মতো পালন করছে কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত করবে আমেরিকা। বৈঠকের ঠিক আগে আমেরিকার এই পদক্ষেপের অর্থ কী, তা কারও কাছে স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, বিদেশি সংস্থার উপরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ট্রাম্পের আগের দফাতেই শুরু হয়েছিল। জাতীয় সুরক্ষার নামে একগুচ্ছ বিদেশি সংস্থার তালিকা তৈরি করেছিল তারা। চাপানো হয়েছিল হরেক বিধিনিষেধ এবং নিয়ন্ত্রণ। ২০২০ সালে চিনা বাণিজ্য মন্ত্রক একই ভাবে বিদেশি সংস্থার তালিকা তৈরি করে। উদ্দেশ্য ছিল প্রয়োজন হলেই নিয়ন্ত্রণ চাপানো। এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চিনা রাজনীতির গবেষক নিল টমাস বলছেন, ‘‘চিন সেরাটা থেকে শেখার চেষ্টা করে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তারা ওয়াশিংটনকেই অনুসরণ করছে। যাদের বিধির প্রভাব তারা নিজেরা ভোগ করেছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)