আমেরিকায় ভারতের পণ্য ঢুকলেই ২৫% শুল্ক দিতে হবে এ মাসের ৭ তারিখ থেকে। বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগীকে বিন্দুমাত্র রেয়াত না করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তাঁর সিদ্ধান্ত পাকা করে দিলেন, তখন প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নয়াদিল্লি থেকে সরকারি সূত্র জানাল, এ দেশের উপর এই শুল্কের খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলেই আশা করা হচ্ছে। কারণ, ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া বেশির ভাগ জিনিস ইতিমধ্যেই তাদের শুল্ক ছাড়ের আওতায় রয়েছে (যেমন ওষুধ, বৈদ্যুতিন পণ্য ইত্যাদি)। তার বাইরে মাত্র ৪০০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি রফতানিই শুধু ঝুঁকির মুখে। এমনকি দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধির হার কমতে পারে বড়জোর ০.২ শতাংশ বিন্দু।
সেই সঙ্গে শুক্রবার মোদী সরকারের ওই সূত্রের পরিষ্কার বার্তা, শুল্ক আরোপ করে যতই চাপ দেওয়া হোক না কেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তিতে জিএম শস্য-সহ কৃষিপণ্য এবং দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রীতে কোনও রকম শুল্ক ছাড় দিয়ে আমেরিকার জন্য বাজার হাট করে দেবে না ভারত। পড়িমড়ি করে চুক্তি করার জন্য এমন কোনও শর্তে আপস করা হবে না, যা দেশের ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পকে বিপদে ফেলতে পারে। কারণ, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াই তাদের প্রথম লক্ষ্য। উল্লেখ্য, এই কৃষিপণ্য, জিএম শস্য, দুধ ও দুগ্ধজাত জিনিসের ক্ষেত্রেই ভারতের বিশাল বাজারে অবাধ প্রবেশ চাইছে ওয়াশিংটন। নয়াদিল্লি তাতে নারাজ। বাণিজ্য চুক্তি আটকে যাওয়ার যা অন্যতম কারণ বলে খবর।
ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ভারতীয় পণ্যে ২৫% শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে রাশিয়া থেকে দেদার অস্ত্রশস্ত্র এবং তেল কেনার জন্য শাস্তিমূলক জরিমানাও। তবে এ দিন তার অঙ্ক জানানো হয়নি। সরকারের সূত্রের অবশ্য দাবি, ইতিমধ্যেই রাশিয়ার থেকে তেল কেনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিকল্প নানা উৎসেরসন্ধান চলছে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশেরও মত, আমেরিকার ২৫% শুল্ক এখনই চাপে ফেলবে না ভারতকে। কারণ, এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির বেশির ভাগটাই দেশীয় চাহিদার উপর নির্ভরশীল। গত বছর মোট রফতানির প্রায় ১৮% আমেরিকায় গেলেও, জিডিপিতে তার ভাগ খুব বেশি হলে ২%। তবে তার তাঁদের ভাবনা অন্যত্র। অনেকেরই বক্তব্য, চড়া শুল্ক এমন সময় চাপল, যখন এ দেশের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে। ক্রেতার আস্থা, চাহিদা এবং সংস্থাগুলির লগ্নির শ্লথ গতি ঢিমে করছে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে যে ৬.৫% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, তা চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর। এক দিকে ডলারের সাপেক্ষে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটছে, অন্য দিকে বিশ্ব বাজারে চড়তে থাকা তেলের দাম আমদানির খরচ বাড়াচ্ছে।
তবে কিছু ক্ষেত্রে ট্রাম্প শুল্কের জের ভাল মতো টের পাওয়া যাবে বলেও দাবি রফতানিকারীদের। যার মধ্যে রয়েছে বস্ত্র, রত্ন-অলঙ্কার, তেল শোধন-সহ কিছু ক্ষেত্র। এগুলি সাধারণ ভাবে রফতানি-নির্ভর এবং শ্রমনিবিড়। তাঁদের মতে, শুল্ক এই সব পণ্য রফতানি করার খরচ বাড়াবে। ফলে বেড়ে যাবে সেগুলির দাম। কর্মী থেকে বড় সংস্থার কারখানা, পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্র চাপে পড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, যে সব পণ্য আমেরিকার বাজারে এতদিন মারকাটারি বিক্রি হত, সেগুলি এখন দামি হওয়ায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। ফলে সকলের না হলেও, কিছু শিল্পের উদ্বেগ বাড়ছে। রফতানি ধাক্কা খেলে দেশের উৎপাদনে প্রভাব পড়বে। বেশ কিছু কর্মীর কাজ হারানোর আশঙ্কাও থাকছেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)