E-Paper

আর্থিক বৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ! কেন্দ্রের রিপোর্টে বাস্তবের প্রতিফলন কম বলল আইএমএফ, কমাল রেটিংও

সরকারি পরিসংখ্যানে দাবি, জিএসটি কমায় চাহিদা বৃদ্ধির আশা কল-কারখানার উৎপাদনকে ঠেলে তুলেছে। পরিষেবা ক্ষেত্র উন্নতি করেছে বিস্তর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫২

—প্রতীকী চিত্র।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে দেশ-বিদেশের মূল্যায়ন সংস্থা, সকলের পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে গেল জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার। হল ৮.২%। সরকারি পরিসংখ্যানে দাবি, জিএসটি কমায় চাহিদা বৃদ্ধির আশা কল-কারখানার উৎপাদনকে ঠেলে তুলেছে। পরিষেবা ক্ষেত্র উন্নতি করেছে বিস্তর। তাই বৃদ্ধি এত চড়া। এই হার কেন্দ্রের সংস্কারের পদক্ষেপ ও আর্থিক শৃঙ্খলার সুফল বলে প্রচারেও নামেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বহু চেষ্টা করেও পরিস্থিতি মেরামত করতে পারেনি কেন্দ্র। কারণ, তার আগেই সামনে এসেছে দেশের অর্থনীতি নিয়ে আইএমএফের বার্ষিক পর্যালোচনা রিপোর্ট। যেখানে দাবি, ভারতের জাতীয় অ্যাকাউন্টের পরিসংখ্যানের মূল্যায়ন ‘C’। একদম শেষের সারির আগের ধাপ। কারণ, হিসাবের জন্য নেওয়া তথ্যে খামতি আছে। এর মধ্যেই পড়ে জিডিপি। ফলে অর্থনীতির আসল ছবি ফুটে ওঠে না। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তথ্য সেকেলে, অবাস্তব। তাই তার মূল্যায়ন ‘B’।

কেন্দ্রের দাবি, এই বৃদ্ধি ১৮ মাসে সর্বোচ্চ। তবে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘এটা খুবই হাস্যকর যে, আইএমএফ ভারতের পরিসংখ্যানকে সি গ্রেডে ফেলার পর দিনই আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮% ছাড়ানোর হিসাব এল। জিডিপি ও মূল্যবৃদ্ধির অবাস্তব তথ্যের সঙ্গে মানুষের অভিজ্ঞতার মিল নেই।’’ তাঁর বার্তা, বাজারে পণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপাকে মানুষ। অথচ কেন্দ্রের খাতায় কমছে মূল্যবৃদ্ধি। খাদ্যপণ্যের মূল্য-হ্রাস ঘটছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। সরকারের মুখ পুড়ল বিশ্বের সামনে। কারণ, দেশ-বিদেশের মঞ্চ থেকে মোদী ভারতের দ্রুততম বৃদ্ধির অর্থনীতি হওয়ার বার্তা দেন। এ দিনও দিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীবলেন, ‘‘২০১১-১২ সালকে ভিত্তিবর্ষে ধরে এখন মূল্যবৃদ্ধির হিসাব অর্থহীন।’’ আইসিএআই-এর পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, ‘‘আর্থিক তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য মূলতপ্রচার সর্বস্ব হলে স্বচ্ছতা থাকে না। কেন্দ্রের দ্রুত সচেতন হওয়া জরুরি।’’ অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের অভিযোগ, আগে জিডিপি বা মূল্যবৃদ্ধি-সহ অর্থনীতি নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ হত, তার সত্যতা সারা বিশ্ব বিশ্বাস করত। কারণ তাতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছিল না। কিন্তু এখন থাকে। আইএমএফের রিপোর্টের বিরূপ প্রভাব ভারতে বিদেশি লগ্নিতে পড়তে পারে।

কেন্দ্রের পরিসংখ্যান

গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশের প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮.২%।

কল-কারখানায় উৎপাদন বেড়েছে ৯.১%। কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি কমে ৩.৫%।

পরিষেবা ক্ষেত্রে ১০.২%।

মূল্যবৃদ্ধি বাদে জিডিপি বেড়েছে ৮.৭% হারে।

বছরের প্রথমার্ধে (এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে) বৃদ্ধি ৮%।

সরকারি মহলের দাবি, ফলে চলতি অর্থবর্ষে তার হার ৭% ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পরিসংখ্যানে প্রশ্ন

আইএমএফ ভারতের জাতীয় অ্যাকাউন্টের পরিসংখ্যান বা তথ্যের যথার্থতার মূল্যায়ন নামিয়ে ‘C’ করেছে। যা সর্বনিম্ন সারির আগের ধাপ।

এর মধ্যে পড়ছে জিডিপি, বাজারে উৎপাদিত পণ্য-পরিষেবার মোট মূল্য ইত্যাদি। ফলে পুরো হিসাবটাই প্রশ্নের মুখে।

মূল্যবৃদ্ধি-সহ অন্যান্য তথ্যের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন ‘B’।

আইএমএফের দাবি, খামতি থাকছে সংগৃহীত তথ্যে, হিসাবের পদ্ধতি দুর্বল।

যেমন, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির ভিত্তিবর্ষ (২০১১-১২) সেকেলে। হিসাবের সময় মান্ধাতার আমলের পণ্য ধরা হয়। সঠিক নয় সেগুলির গুরুত্বও। জিডিপি মাপার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও খরচের হিসাব সামঞ্জস্যহীন।

অর্থনীতিতে নজরদারির খামতিতে ব্যাহত বহু ক্ষেত্র। তার আসল ছবি, অসংগঠিত ক্ষেত্র ও ক্রেতার খরচের অভ্যাস তথ্য-পরিসংখ্যানে ফুটে উঠছে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Economy Indian Economy IMF

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy