Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
শ্লথ অর্থনীতির ধাক্কা রাজ্যের

খরচে টান, ঝুলে বহু প্রকল্পের ভাগ্য  

মাসখানেক আগে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দাবি করেছিলেন, দেশের তুলনায় রাজ্যের বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

সারা দেশের অর্থনীতিতে মন্দ গতির প্রভাব এড়াতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গও। অর্থ দফতরের একাংশের দাবি, বিভিন্ন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে চাহিদার ভাটা, বেতন কমিশনের বাড়তি চাপ এবং রাজ্যের নিজস্ব আয়ের বহর কমার ত্রিফলায় উন্নয়ন ও পরিকল্পনা খাতের অর্থ বরাদ্দে ইতিমধ্যেই কোপ পড়তে শুরু করেছে। সরকারি ভাবে অবশ্য এ কথা স্বীকার করতে নারাজ নবান্ন।

মাসখানেক আগে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দাবি করেছিলেন, দেশের তুলনায় রাজ্যের বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি। যদিও অক্টোবর পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব বলছে, গত অর্থবর্ষের এই সময়ে রাজ্যের নিজস্ব আয় যা ছিল, এ বার সব ক্ষেত্রেই তা কমেছে। সব চেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে পুজোর বাজার। অর্থ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পুজোর মরসুমে রাজ্যের ঘরে কর বাবদ এসেছিল ২১,১৬৭ কোটি টাকা। এ বার সেখানে উৎসবের দু’মাসে কর বাবদ আয় হয়েছে ১৩,৫৯৩ কোটি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য টাকার অংশ অনেকটাই।

কোন খাত অক্টোবর পর্যন্ত বাজেট বরাদ্দের আগের বছর

(কোটি টাকায়) কত (%) অক্টোবরে (%)

রাজকোষে চাপ

• ধাক্কা খেয়েছে কর সংগ্রহ। পুজোর সময়ে তা আশানুরূপ হয়নি।
• জানুয়ারি থেকে বেতন খাতে খরচ অনেকটাই বাড়বে।
• বাজেটে প্রস্তাবিত ঋণের ৬১.৩৪% নেওয়া হয়ে গিয়েছে অক্টোবরের মধ্যে। আরও নিতে হতে পারে শীঘ্রই।

অর্থকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নতুন প্রকল্প অনুমোদন বা চলতি খরচের বহর বাড়ানো কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে অর্থ দফতর। এক কর্তা বলেন, ‘‘টাকার অভাবে ছোট ও মাঝারি প্রকল্প আটকে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে পূর্ত দফতরের বহু কাজ।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, যা পরিস্থিতি, তাতে সামনের মাস থেকে বেতন খাতে খরচ অনেকটাই বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে দফতরের সচিবদের আর্থিক ক্ষমতা ১০ কোটি থেকে কমিয়ে ১ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আগাম প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া সরকারি প্রকল্পে ছাড়পত্র দিচ্ছে না অর্থ দফতর। মৌখিক ভাবে দফতরের সচিবদের বার্তা দেওয়া হয়েছে বাজেট বরাদ্দের ৭৫ শতাংশের মধ্যেই খরচ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। নতুন নির্মাণ কাজ বা সংস্কারের কাজে অর্থ দফতর এতটাই কড়াকড়ি করছে যে, দফতরে ৫০,০০০ টাকার বেশি সংস্কারের কাজ করতে হলেই নবান্নে ফাইল পাঠাতে বলা হয়েছে।

সূত্রের খবর, রাজকোষ সামলাতে অর্থবর্ষের শেষে পরিকল্পনা খাতের ২৫% বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তবে আর্থিক দুরবস্থার কথা মেনে নিয়ে এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ জারি করতে রাজি হচ্ছে না শীর্ষ মহল। পাশাপাশি, রাজ্যের নিজস্ব আয়ই বা কী ভাবে বাড়ানো সম্ভব তা নিয়ে দিশেহারা অর্থ কর্তারা। কারণ, মদ আর লটারি ছাড়া রাজ্য সরকারের হাতে কর বাড়ানোর অবকাশ কম। আর এই দু’টিতে হাত দিলেই বিরোধীরা ময়দানে নেমে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা খোদ সরকারি কর্তাদের।

অর্থ দফতর জানাচ্ছে, অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অনুদান বাবদ প্রায় ১৬,০০০ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়েছে। যা প্রাপ্য অনুদানের ৪৮%। তবুও রাজ্যের নিজস্ব আয় কমে যাওয়ায় অবস্থা সামলাতে বাজার থেকে ধার করার দিকেই যেতে হচ্ছে অর্থ দফতরকে। হিসেব বলছে, অক্টোবর পর্যন্ত বাজেটে ঘোষিত ঋণ প্রস্তাবের ৬১.৩৪% ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়ে গিয়েছে। গত অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রস্তাবিত ঋণের ৩৮% নিতে হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Economic Slowdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE