সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যে সাফল্য সফটওয়্যার বা চিপ ডিজাইনিংয়ে আসেনি, রাজ্য তা হাসিল করতে পারে অ্যানালিটিক্স বা তথ্য বিশ্লেষণে। এখন সারা দুনিয়ায় ভীষণ ভাবে কদর বাড়া এই ব্যবসায় লগ্নির গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে কলকাতা। পাঁচ শহরের ভিড়ের থেকে স্বতন্ত্র হতে পারে নিজের মেধাসম্পদকে বাজি করে। আর এই দৌড় জেতার পরিকল্পনা তৈরি করতেই এ বার মাঠে নেমেছে বণিকমহল। তথ্য বিশ্লেষণ কেন্দ্র গড়ার জন্য কলকাতাকে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে তারা। চাইছে অ্যানালিটিক্স হাব-এর ব্র্যান্ড হিসেবে এই শহরকে তুলে ধরতে। এবং সেই জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা তৈরি করছে বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স।
বরাবর বুদ্ধি বেচে খাওয়া বাঙালির মেধায় আস্থা রেখে ইতিমধ্যেই কলকাতাকে পাখির চোখ করছে একের পর এক উপদেষ্টা সংস্থা। সম্প্রতি এখানে নিজেদের টেকনোলজি হাব সম্প্রসারণের পরিকল্পনা জানিয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স (পিডব্লিউসি)। তথ্য ভাণ্ডার (আইটি ডেটা সেন্টার) গড়ার জন্য এই শহরকে বেছে নিয়েছে আর এক উপদেষ্টা বহুজাতিক কেপিএমজি। একই সঙ্গে, কেপিএমজি গ্লোবাল সার্ভিসেস-এর তৃতীয় কেন্দ্র তৈরির জন্যও কলকাতার কথা বিবেচনা করছে তারা।
ব্যবসা হিসেবে তথ্য কেন্দ্র এবং তথ্য বিশ্লেষণ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে বিশ্ব জুড়ে অ্যানালিটিক্সের বাজারের মাপ। গার্টনার-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেব, তথ্য বিশ্লেষেণে বিশ্ব বাজারের মাপ এখন ৯,৬০০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে তা ছাড়িয়ে যাবে ১২ হাজার কোটি ডলারও। এমনকী মন্দার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ২০১৩ সালেও এই বাজার বেড়েছে ৮% হারে। ফলে রাজ্যের সামনে আসা এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করতে নারাজ বণিকসভাটি।
সফটওয়্যারে অনেক পিছন থেকে দৌড় শুরু করেছিল রাজ্য। চিপ ডিজাইনিংয়ে আবার তা থমকে গিয়েছে মাঝ পথে। ফলে অন্তত তথ্য বিশ্লেষণে এগিয়ে থাকার সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না রাজ্যও। তা ছাড়া, এর জন্য পরিকাঠামো তৈরির চাপ অনেক কম। বেশি জমি বা মোটা বিনিয়োগের সমস্যা কম। ফলে মূলত মানব সম্পদের জোরেই ফিনিশিং লাইনে প্রথম পৌঁছে যাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর হাতেগরম উদাহরণ হিসেবে তাঁরা তুলে আনছেন অ্যাবজুবা নামে একটি স্টার্ট-আপ সংস্থার কথা। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোগ পুঁজি সংস্থা কলকাতার এই সংস্থায় ৬০ লক্ষ ডলার ঢেলেছে। সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রাজীব প্রতাপের দাবি, শুধু দক্ষ মানব সম্পদের দৌলতেই তাঁদের গ্রাহক-তালিকায় রয়েছে বিদেশের বিভিন্ন নামী সংস্থা।
বিশ্বের প্রথম চার উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্তা অম্বরীশ দাশগুপ্ত বলেন, “ তথ্যপ্রযুক্তিতে শহরের নিজস্ব পরিচিতি গড়তে তথ্য বিশ্লেষণের মতো ক্ষেত্র কলকাতার জন্য উপযুক্ত। এর জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা, পুঁজি ও ব্যবসায়িক কৌশল হাতের কাছেই রয়েছে।”
ন্যাসকমের দাবি, তথ্য বিশ্লেষণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দেশের বাজারও। ২০১৩ সালে ১৬.৩ কোটি ডলারের বাজার ২০১৮ সালে ৩৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের প্রথম তিনে আসার লক্ষ্য স্থির করেছে পশ্চিমবঙ্গ। তাতে পৌঁছতে অ্যানালিটিক্স -কে হাতিয়ার করা জরুরি বলে মনে করেন ডেলয়েটের রাজর্ষি সেনগুপ্ত।
এই কেন্দ্র রাজারহাটে গড়ে ওঠা আর্থিক হাবেরও পরিপূরক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যে কোনও প্রকল্প তৈরির প্রাথমিক শর্ত হিসেবে আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। আর্থিক ও অ্যানালিটিক্স, এই দুই হাবের সংযোগ সেই কাজকে আরও সহজ ও দ্রুত করবে বলে দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy