১৪ মাসে এই নিয়ে ৭ বার পেট্রোল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক বাড়াল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
আজ ফের পেট্রোলের উপর লিটার প্রতি ৩৭ পয়সা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ২ টাকা হারে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে অবশ্য পেট্রোল পাম্পে খুচরো তেলের দাম বাড়ছে না। কারণ ১ জানুয়ারি যখন পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমানো হয়েছিল, তখন বিশ্ব বাজারে তেলের দামের পতনের ফলে যতখানি কমানো উচিত ছিল, সেই পরিমাণে তা কমানো হয়নি।
এক বছর আগে ভারতে আমদানি করা অশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেল প্রতি প্রায় ৭০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে ৩২ ডলারে। সাত বার শুল্ক না-বসানো হলে পেট্রোল ও ডিজেল, দু’টির দামই সাধারণ ক্রেতার জন্য লিটারে আরও প্রায় ১০ টাকা করে কমত। সে জায়গায় শুল্ক বসিয়ে চলতি অর্থবর্ষে ১০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি আয় সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে এটা তাঁর বড় ভরসা হয়ে উঠবে।
পেট্রোল-ডিজেলের দাম এখন সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমার সঙ্গে তাল রেখে এ দেশেও তেলের দাম কমা উচিত। কিন্তু যতটা কমার কথা, তা হচ্ছে না। ১ জানুয়ারি যেমন পেট্রোলের দাম দিল্লিতে লিটারে মাত্র ৬৩ পয়সা ও ডিজেলে ১.০৬ টাকা কমানো হয়। অথচ বিশ্ব বাজারে তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তা আরও কমা উচিত ছিল। তার বদলে দু’দিন পরেই, আজ শুল্ক বাড়াল কেন্দ্র। ফলে আমজনতার সুবিধা না-হলেও কেন্দ্রের কোষাগারে রাজস্ব ঢুকছে।
মোদী সরকারের এই নীতি নিয়ে আগে থেকেই সরব ছিলেন বিরোধীরা। আজ ফের শুল্ক বাড়ার পরে বিরোধী নেতারা অভিযোগ তুলেছেন, পাঠানকোটে সন্ত্রাসবাদী হামলার উপর যখন গোটা দেশ ও সংবাদমাধ্যমের নজর, সেই ফাঁকে মোদী সরকার চুপিসারে তেলের উপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, শুল্ক থেকে বাড়তি আয় জাতীয় সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা তৈরিতে খরচ হচ্ছে। কারণ যাঁরা পেট্রোল-ডিজেল কিনে গাড়ি চালাবেন, তাঁরাই ভাল রাস্তার সুবিধা পাবেন। কেন্দ্রের বাড়তি আয়ের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলিও পাবে। কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, রাজকোষ পরিচালনায় নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই মোদী সরকার সাধারণ মানুষকে ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব সচিব হংসমুখ অধিয়া বলেন, বাড়তি শুল্ক বসানোর ফলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ছে না। তবে কেন্দ্রের বাড়তি ৪,৩০০ কোটি টাকা আয় হবে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এ বছর প্রত্যক্ষ কর (আয়কর ও কোম্পানি কর) বাবদ আশানুরূপ আয় হচ্ছে না। কিন্তু রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.৯ শতাংশে কমিয়ে আনার যে-লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন জেটলি, তা থেকে তিনি সরতে নারাজ। এই পরিস্থিতিতে অশোধিত তেলের দামে পতন কার্যত মেঘ না-চাইতেই জল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই অশোধিত তেলের দাম কমায় আমদানির খরচ কমেছে। তারপর তেলের উপর কর বসিয়ে বাড়তি পরোক্ষ করের আয় থেকে প্রত্যক্ষ করের ঘাটতি সামলানো হচ্ছে।
চলতি অর্থবর্ষে তিন বার শুল্ক বৃদ্ধি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে। ২০১৪-র নভেম্বর থেকে ৭ বার শুল্ক বৃদ্ধির হিসেব ধরলে বাড়তি আয় ৩২,৫০০ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy