Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Price Hike

বাজার দৌড়লেও অনিশ্চয়তা বহাল

উঁচু বাজারে লগ্নিকারীদের শেয়ার বেচে মুনাফা ঘরে তোলার তাগিদে কিছু পতন হয়তো দেখা যাবে। তবে সেই সংশোধনের বাইরে সূচকের এই দৌড় এখনই থামবে বলে মনে হচ্ছে না।

An image of price hike

—প্রতীকী চিত্র।

অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪৩
Share: Save:

দেশের বহু জায়গায় কম বৃষ্টি খাদ্যপণ্যের দাম আরও চড়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। এর ফলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি আরও মাথা তুললে (এখন ৭.৪৪%) ঋণে সুদ বৃদ্ধির আশঙ্কা। তার উপর বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের ব্যারেল ফের ৯০ ডলার পার করে দেশে জ্বালানির দাম কমার আশায় জল ঢালছে। দুর্বল হচ্ছে টাকা। তবু এই সব কিছু অগ্রাহ্য করে নাগাড়ে ছুটছে শেয়ার বাজার। গত ছ’টি লেনদেনে সেনসেক্স বেড়েছে মোট ১৭৫৮ পয়েন্ট, নিফ্‌টি ৫৬৭।

উঁচু বাজারে লগ্নিকারীদের শেয়ার বেচে মুনাফা ঘরে তোলার তাগিদে কিছু পতন হয়তো দেখা যাবে। তবে সেই সংশোধনের বাইরে সূচকের এই দৌড় এখনই থামবে বলে মনে হচ্ছে না। সেটা হলে কয়েক দিনের মধ্যে উচ্চতার নতুন নজির গড়বে বাজার। সেনসেক্স গত ২০ জুলাই ৬৭,৫৭২ অঙ্কে পা রেখেছিল। এখনও পর্যন্ত ওটাই সর্বোচ্চ। তাই নতুন শিখরে পৌঁছতে তাকে পাড়ি দিতে হবে মাত্র ৯৭৩ পয়েন্ট। প্রথমবার ২০ হাজার ছোঁয়ার পথে নিফ্‌টি-ও।

এখন প্রশ্ন হল, বাজার এত শক্তি পাচ্ছে কোথা থেকে?

উত্তরে উঠে আসতে পারে একগুচ্ছ বিষয়। যেমন— নয়াদিল্লিতে জি২০-র শীর্ষ সম্মেলন এবং তার হাত ধরে ডিজিটাল কর্মকাণ্ড, পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ এ দেশের বহু সদর্থক দিক বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্র নেতার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া। যা লগ্নি টানার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। পুজোর মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধির আশা। সর্বোপরি এপ্রিল-জুনে ৭.৮% আর্থিক বৃদ্ধির দরুন নতুন ভরসা।

জি২০ সম্মেলনের শেষ দিন ছিল রবিবার। এর পরেও ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলবে। ইতিমধ্যেই এই ধরনের কিছু বৈঠক হয়েছে। আর্থিক দিক থেকে ভারতের পক্ষে সহায়ক কিছু প্রস্তাব উঠেও এসেছে। কর্পোরেট মহল সেগুলির চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত। পুরো ছবিটা স্পষ্ট হলে এবং তা দেশের পক্ষে সদর্থক হলে বাজার যে আরও উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে সরকার জৈব জ্বালানি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির ডাক দিয়েছে বিভিন্ন দেশকে। এ বারের সম্মেলন দিল্লিতে হওয়ায় ভারত তা থেকে সবচেয়ে বেশি ফায়দা তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই ভাবনা বাজারকে তাতিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ। লগ্নিকারীরা আগামী দিনে হিসাব করে দেখবেন কোন কোন সংস্থা জি২০ সম্মেলনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত থেকে সব থেকে বেশি লাভবান হতে পারে। শেয়ারে বিনিয়োগ তার প্রভাব থাকবে।

এর পাশাপাশি দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের মরসুমের কেনাকাটা। পুজো এবং দিওয়ালির তারিখ অক্টোবর এবং নভেম্বরে পড়লেও, তার জন্য বেশিরভাগ পণ্য তৈরি এবং সরবরাহ হবে চলতি মাসের মধ্যেই। অর্থাৎ চাহিদা যদি বাড়ে, তার সুফলের অনেকখানি প্রতিফলিত হবে সংস্থাগুলির জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফলে। আশা, এ বার কেনাকাটা ভাল হবে। এই ভাবনা থেকেও শক্তি পাচ্ছে শেয়ার বাজার।

তবে চিন্তায় রাখছে অর্থনীতি। চাষবাস ভাল না হওয়ায় গ্রামে বহু মানুষের হাতে কম টাকা থাকার আশঙ্কা। ভারতের একটা বড় অংশ গ্রামাঞ্চল। ফলে চাহিদা কমায় গ্রামীণ অর্থনীতি ঝিমিয়ে থাকলে তার ধাক্কা গোটা দেশে পড়তে বাধ্য। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির যে বিরাট ঘাটতি রয়েছে, সেই সমস্যা সরকার কী ভাবে সামাল দেয় তা-ই এখন দেখার।

বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দামও ৯০ ডলার ছাড়িয়েছে। ফলে দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম কমার সম্ভাবনা কমেছে। ডিজ়েল সস্তা হলে পণ্য পরিবহণের খরচ কমে মূল্যবৃদ্ধির হারকে নামাতে পারত। খুচরো বাজারে খাদ্য-সহ বিভিন্ন সামগ্রীর দাম চড়ে থাকায় আগামী মার্চের মধ্যে সুদের হার কমার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তার উপর ডলারের সাপেক্ষে টাকা তলিয়ে যাচ্ছে। এক ডলারের দাম ৮৩ টাকা পার করে ৮৩.১২ টাকায় থিতু হয়েছে। এতে তেল সহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বিল বাড়বে। অর্থাৎ বাজার চারপাশের আশঙ্কাগুলিকে সাময়িক পাশ কাটালেও, মাঝারি মেয়াদে তা যথেষ্ট বেগ দিতে পারে। ভরসা একটাই, সামনে ভোট। রান্নার গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমেছে। তেলও যে কমানো হবে না, বলা যাচ্ছে না।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE