Advertisement
E-Paper

জিএসটিতে এক গুচ্ছ সুবিধা ছোট-মাঝারি শিল্পকে

বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে যে এক গুচ্ছ ঘোষণা জেটলির মুখে শোনা গেল, প্রত্যাশিত ভাবেই তাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প। বিশেষত কর জমার পদ্ধতি সরল হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও খুশি করেছে ছোট শিল্পকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
কল্পতরু: জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অরুণ জেটলি। পিটিআই

কল্পতরু: জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অরুণ জেটলি। পিটিআই

ভোটের বছরে আমজনতার মন পেতে কিছু দিন আগেই ৯৯% পণ্য ও পরিষেবাকে ১৮% বা তার কম জিএসটির আওতায় আনার স্বপ্ন ফেরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর কারণে ক্ষুব্ধ ছোট-মাঝারি শিল্পের ক্ষতে মলম লাগাতে সেই পণ্য-পরিষেবা করেই এক গুচ্ছ বদলের কথা ঘোষণা করলেন তাঁর অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

বৃহস্পতিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে যে এক গুচ্ছ ঘোষণা জেটলির মুখে শোনা গেল, প্রত্যাশিত ভাবেই তাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্প। বিশেষত কর জমার পদ্ধতি সরল হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও খুশি করেছে ছোট শিল্পকে। কিন্তু তেমনই বিশেষজ্ঞদের মতে, তা একই সঙ্গে রেখে গিয়েছে এক গুচ্ছ প্রশ্নও।

যেমন, বাধ্যতামূলক ভাবে জিএসটিতে নথিভুক্তি এবং ওই কর দেওয়ার ক্ষেত্রে বার্ষিক ব্যবসার অঙ্কের ঊর্ধ্বসীমা দ্বিগুণ করার রাস্তা খুলে দিয়েছে কেন্দ্র। বলেছে কম্পোজিশন প্রকল্পের আওতা প্রসারিত করার কথা। নতুন করে তা খুলে দিয়েছে পরিষেবা ক্ষেত্রের জন্য। আর এই সমস্ত কিছু দেখে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এমনিতেই তো জিএসটি আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রায় নাগাড়ে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এই অবস্থায় এই বাড়তি ‘ছাড়ের দরুন’ যে রাজস্ব কমবে, তার ক্ষতি তারা সামাল দেবে কী ভাবে? সে ক্ষেত্রে কী ভাবেই বা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকবে রাজকোষ ঘাটতি?

এ দিন ঘোষণা

কর বন্ধনীর বাইরে

• এখন কোনও পণ্য সরবরাহকারীর ব্যবসার অঙ্ক বছরে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে, তাঁর জিএসটিতে নথিভুক্তি বা ওই কর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এ বার ওই সীমা বেড়ে হল ৪০ লক্ষ।
তবে ২০ অথবা ৪০ লক্ষের ওই দুই সীমার মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের তা জানাতে হবে।
পরিষেবা সরবরাহকারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য ঊর্ধ্বসীমা থাকছে ২০ লক্ষ টাকাই। উত্তর-পূর্ব সমেত বিশেষ বন্ধনীভুক্ত রাজ্যগুলির জন্যও হচ্ছে বছরে ১০ লক্ষ অথবা ২০ লক্ষ টাকা। এ ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত রাজ্যের।

কম্পোজিশন প্রকল্পের সুবিধা

• বছরে পণ্য ব্যবসার অঙ্ক দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত হলে মিলবে কম্পোজিশন প্রকল্পের সুবিধা। আগে ছিল এক কোটি পর্যন্ত।
অর্থাৎ, বছরে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসার ক্ষেত্রে জিএসটির জটিল পদ্ধতি এড়িয়ে শুধু মোট আয়ের ১% কর মেটালেই চলবে। যদিও সে জন্য বেশ কিছু শর্ত আছে। যেমন, কাঁচামাল ইত্যাদির জন্য আগে মেটানো করের টাকা (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট) ফেরত মিলবে না।
বিশেষ বন্ধনীভুক্ত রাজ্যগুলিকে অবশ্য এক সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে তারা কত টাকা পর্যন্ত এই ঊর্ধ্বসীমা চায়।
• পরিষেবা প্রদানকারীর বার্ষিক ব্যবসার অঙ্ক ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে, তারাও এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। আগে যা ছিল না। তবে তাদের কর গুনতে হবে ৬% (কেন্দ্রীয় ও রাজ্য জিএসটি ৩% করে)।
• শুধু রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে এই করের হার আগেই ছিল ৫%।

কর-জমার সরলীকরণ

• কম্পোজিশন প্রকল্পের আওতায় থাকলে, সরল হবে কর জমা। কর প্রতি ত্রৈমাসিকে জমা দিতে হলেও রিটার্ন দিতে হবে বছরে এক বারই।

কেরলের জন্য

• নিজেদের সীমানার মধ্যে হওয়া পণ্য-পরিষেবা সরবরাহে দু’বছর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১% প্রাকৃতিক বিপর্যয় সেস বসাতে পারবে বন্যায় বিধ্বস্ত কেরল।

যদিও অর্থমন্ত্রীর দাবি, ক্ষতি আখেরে কতটা হবে, এখনই তার আঁচ পাওয়া শক্ত। আগেও দেখা গিয়েছে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ইত্যাদির সুবিধা পেতে বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও জিএসটিতে নথিভুক্ত হয়েছে প্রায় ১০.৯৩ লক্ষ সংস্থা। ফলে এখন কত সংস্থা সেই পথে হাঁটবে আগে তা দেখা জরুরি। ক্ষতি নির্ভর করবে তাতেই।

বিরোধীরা অবশ্য নিশ্চিত, ভোটের মুখে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের তীব্র ক্ষোভের আঁচ পেয়েই জিএসটির প্রলেপ দিতে এত মরিয়া হয়েছে কেন্দ্র। এ নিয়ে প্রচারের সুরকে বেঁধেছে উঁচু তারে। যেমন, হালে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ওই বাধ্যতামূলক নথিভুক্তির বাইরে ৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যবসাকে রাখা হতে পারে। কিন্তু এ দিন পরিষদের বৈঠকে ওই অঙ্ক ওঠেইনি। কথা হয়েছে ৪০-৫০ লক্ষের ব্যবসা নিয়ে। আবাসন শিল্পেও কম্পোজিশন প্রকল্প চালু করে যাতে কেন্দ্র নিছক রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে, তার জন্য ওই প্রস্তাবকে আপাতত পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিগোষ্ঠীর কাছে। বলা হয়েছে, তাতে ক্রেতাদের সুবিধা হবে না।

সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে সিআইআই, ছোট শিল্পের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (ফিসমে)। ফিসমে-র সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজের আশা, সরল হবে কর ব্যবস্থাই।

GST Tax Arun Jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy