বিদেশি লগ্নিকারীরা ফিরতেই ফের চাঙ্গা শেয়ার বাজার। ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে সেনসেক্স ও নিফটি। চলতি বছরের মে মাসে ফরেন পোর্টফোলিয়ো ইনভেস্টর বা এফপিআই মারফত ১৯ হাজার ৬৮৬ কোটির এসেছে বিনিয়োগ। গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর এক মাসের নিরিখে এটি সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে বিদেশি লগ্নিকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিলেন।
ব্রোকারেজ ফার্মগুলি জানিয়েছে, এ বছরের এপ্রিলে এফপিওতে নেট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ৪,২২৩ কোটি টাকা। তবে এ বছরের প্রথম তিন মাসে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ তুলে নেন তাঁরা। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে বিদেশি লগ্নিকারীদের প্রত্যাহার করা অর্থের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৭৮ হাজার ২৭ কোটি, ৩৪ হাজার ৫৭৪ কোটি এবং ৩ হাজার ৯৭৩ কোটি।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীদের শেয়ার বাজারের প্রতি আস্থা ফিরেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মাসে ৪৭ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা লগ্নি করেন তাঁরা। দেশি এবং বিদেশি— দু’তরফে অর্থ প্রাপ্তির জেরে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সেনসেক্স এবং নিফটি-৫০র সূচক সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। শেষ তিন মাস ধরে বাজারে ইতিবাচক ছবি দেখতে পাওয়ার নেপথ্যে একে সবচেয়ে বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সূচক সার্বিক ভাবে নিম্নমুখী থাকায় লগ্নিকারীদের বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু শেষ তিন মাসে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোয় সেই ক্ষতির অনেকটাই পূরণ করা গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতের বাজারে ফেরার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে।
প্রথমত, দুনিয়ার তাবড় আর্থিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, আগামী দিনে আরও বাড়বে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির সূচক। দ্বিতীয়ত, কর্পোরেট আয় বৃদ্ধির প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয়ত, ডলারের দর নিম্নমুখী হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ফের এ দেশের বাজারমুখো হচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে এশিয়ার অন্য বাজারগুলির মধ্যে নিজের অবস্থান অনেকটাই মজবুত করতে সক্ষম হয়েছে বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ।
গত এপ্রিলে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করার কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের শেয়ার বাজারে এর প্রভাব পড়েছিল। পরে অবশ্য এ ব্যাপারে ৯০ দিনের বিরতি দেয় ওয়াশিংটন। জুলাইয়ে সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। এ বছরের শেষ দিকে প্রকাশ্যে আসতে পারে তার রূপরেখা। ফলে আগামী কয়েক মাস বিদেশি লগ্নির ক্ষেত্রে বাজারে অস্থিরতা দেখতে পাওয়ার আশঙ্কা প্রবল, মত আর্থিক বিশ্লেষকদের।