E-Paper

অস্থির বাজার, ঝুঁকি সত্ত্বেও বিনিয়োগ বাড়ছে শেয়ার এবং ফান্ডে

লগ্নির দুনিয়ায় ঝুঁকি একটি বড় ব্যাপার। কিছু মানুষ আছেন, ঝুঁকি যাঁদের ধাতে সয়না। তাঁরা সব সময় সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আয় কম হলেও, তাঁরা সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৬:০৪
শেয়ার বাজার এখন খুবই অস্থির।

শেয়ার বাজার এখন খুবই অস্থির। —প্রতীকী চিত্র।

বিশ্ব জুড়ে এখন অনিশ্চয়তা। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে বহু দিন ধরে। কিছু দেশের সমস্যা শ্লথ হয়ে আসা অর্থনীতি। কিন্তু সে সবকে পিছনে ফেলে নিজের দেশ-সহ গোটা বিশ্বকে অনিশ্চয়তায় ভরে দিয়েছে মূলত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশির ভাগ দেশের পণ্যে পাল্টা চড়া শুল্ক বসানোর নীতি। যা রফতানিকারী-সহ অনেককে বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে রেখেছে। ঝুঁকি বেড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। যে কারণে শেয়ার বাজার এখন খুবই অস্থির।

লগ্নির দুনিয়ায় ঝুঁকি একটি বড় ব্যাপার। কিছু মানুষ আছেন, ঝুঁকি যাঁদের ধাতে সয়না। তাঁরা সব সময় সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আয় কম হলেও, তাঁরা সুরক্ষার সঙ্গে আপস করতে রাজি নন। এই শ্রেণির লগ্নিকারীরা মূলত সরকারি প্রকল্প পছন্দ করেন। সব সময় এড়িয়ে চলেন বেসরকারিগুলিকে। কম হলেও, নিয়মিত স্থির আয় তাঁদের একমাত্র চাহিদা। বাজারে তেমন একগুচ্ছ প্রকল্প আছে মূলত ব্যাঙ্ক আমানত এবং ডাকঘরে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ে। তবে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাঙ্ক আমানতকে সুরক্ষিত বলে মনে হলেও, বাস্তবে ব্যাঙ্কে লগ্নিকারীর সমস্ত অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে জমা থাকা মাত্র ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ডিআইসিজিসি দ্বারা গ্যারান্টি প্রদত্ত। তবু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পিছনে যেহেতু সরকার থাকে, সেই কারণে সেখানে টাকা রাখা বেসি নিরাপদ বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

পিপিএফ এবং সুকন্যা সমৃদ্ধির মতো স্বল্প সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট ছাড়া বাকি সমস্ত সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করে পাওয়া সুদই করযোগ্য। যে কারণে যাঁদের আয়ের উপরে কর দিতে হয়, তাঁদের কাছে স্থির আয়যুক্ত প্রকল্পগুলি তেমন আকর্ষণীয় বলে নাও মনে হতে পারে। কারণ কর দেওয়ার পরে প্রকৃত আয় অনেকটাই কমে আসে।

আর এক শ্রেনির লগ্নিকারী আছেন, যাঁরা একটু বেশি আয়ের জন্যে ঝুঁকি নিতে পিছপা নন। তাঁদের আছে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের জগত। অত্যন্ত ঝুঁকির কারণে অতীতে বহু মানুষ শেয়ারের দিকে ঝুঁকতেন না। কিছু বছর হল ছবিটা পাল্টেছে। এখন ঝুঁকি মাপা অনেক সহজ। অভিজ্ঞ শেয়ার বিশ্লেষকদের পরামর্শ লগ্নির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। বাজারে শেয়ার ছাড়া সংস্থা এবং মিউচুয়াল ফান্ডগুলিকে এখন সেবির কঠোর শর্ত মেনে চলতে হয় বলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে। শুধু তাই নয়, শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সমস্ত তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিকে। তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রকাশ করতে হয় আর্থিক ফলাফল। অর্থাৎ নথিবদ্ধ প্রতিটি সংস্থার কাজকর্ম এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ। সব কিছু জেনেবুঝে লগ্নির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে ঝুঁকিকে অনেকটাই বাগে রাখা যায়।

বড় মেয়াদে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করেও বহু মানুষ মোটা রিটার্ন পাচ্ছেন। যাঁরা একলপ্তে মোটা টাকা লগ্নি করতে চান না, তাঁরা ছোট আকারে প্রতি মাসে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করে দীর্ঘ মেয়াদে বড় সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন। করের দিক থেকেও আছে অনেক সুবিধা। বর্তমানে শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি এক বছর ধরে রাখার পরে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে, তার প্রথম ১ লক্ষ টাকা থাকে পুরোপুরি করমুক্ত। বছরে লাভ এর বেশি হলে তার উপর কর বসে মাত্র ১২.৫% হারে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বিপুল লোকসান গুনতে হওয়ার ঝুঁকি মাথার উপর নিয়েও বিরাট অংশের কাছে শেয়ার এবং ফান্ডে লগ্নি বেশ আকর্ষণীয়। বিশেষ করে যাঁরা চড়া হারে কর দেন তাঁদের কাছে।

তবে মনে রাখতে হবে, শেয়ার ও ফান্ডে বিপুল রিটার্ন যেমন পেতে পারেন লগ্নিকারী, তেমনই আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাও এগুলিতে অনেকটাই বেশি। ফলে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস না থাকলে এতে পা রাখার আগে সতর্ক থাকতে হবে লগ্নিকারীকে।

কোভিডের পরে গত কয়েক বছর ভারতীয় শেয়ার বাজার লগ্নিকারীদের বেশ ভাল আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। গত অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) জাতীয় আয় ৬.৫০ শতাংশে নেমে এলেও, সারা বিশ্বের নিরিখে তা আছে একদম প্রথম সারিতে। আশা, আগামী দিনেও শেয়ার বাজার লগ্নিকারীদের হতাশ করবে না। একই কারণে ভাল রিটার্ন দিতে পারে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডগুলিও। করের সুবিধা এবং আকর্ষণীয় আয় দেখে অত্যন্ত সাবধানী মানুষদের অনেকেও শেয়ার এবং ফান্ডের দুনিয়াকে আর এড়াতে পারছেন না। ফলে হু হু করে লগ্নিকারীর সংখ্যা বাড়ছে এই দুই ক্ষেত্রে। লাফিয়ে বাড়ছে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। ব্যাঙ্ক থেকে লগ্নি বেরিয়ে ছুটছে শেয়ার এবং ফান্ডের দুনিয়ায়। বিশেষত ব্যাঙ্ক আমানতে সুদ যেহেতু কমতে শুরু করেছে। আগামী দিনে আরও কমতে পারে।

সুদ কমলে তার অনুকূল প্রভাব পড়ে শিল্প এবং শেয়ার বাজারে। লগ্নি বাড়ে। আমানতে সুদের হার আরও নামলে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও আরও অনেক মানুষ পাড়ি জমাতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ড-শেয়ারের বৃত্তে। এতে অবশ্য সমস্যায় পড়তে পারে ব্যাঙ্কগুলি। পুঁজি জোগাড়ে সমস্যা হওয়ায় টান পড়তে পারে তাদের ঋণ দেওয়ার তহবিলে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Investment Fund

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy