টাকা মেটানোর ক্ষমতা নেই। তাই সরকার সাহায্য না করলে আগামী দিনে পরিষেবা বন্ধ হবে বলে ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছে ভোডাফোন আইডিয়া (ভি)। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এ ভাবে সার্বিক গড় আয়ের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে মেটানোর লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি (এজিআর)-র বকেয়া মাফের অনুমতি আদায়েই উদ্দেশ্য। কিন্তু সোমবার সেই খাতেই ৩০,০০০ কোটি টাকা বকেয়া মকুবের আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। যা ঋণ-বকেয়া-নগদের অভাবে জর্জরিত টেলিকম সংস্থাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াল। আরও চিন্তায় পড়লেন গ্রাহকেরা। এ দিন এয়ারটেল ও টাটা টেলি সার্ভিসেসের বকেয়া মকুবের আর্জিও খারিজ করেছে শীর্ষ আদালত।
এই ঘটনার পরেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি সরকারও মুখ ফিরিয়ে নেবে? সেটা হলে, কোথায় যাবেন ভোডাফোনের গ্রাহকেরা? বিশেষত সংস্থা নিজেই যেহেতু বলেছে, সাহায্য ছাড়া ২০২৬-এর মার্চের পরে আর পরিষেবা টানা সম্ভব হবে না। এই রায়ের পর ভি-এর শেয়ার ৯ শতাংশের বেশি পড়ে দিনের শেষে ৬.৭৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সংস্থার শেয়ারমূল্য কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
২০২০-র সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, টেলিকম সংস্থাগুলি এজিআর খাতে কেন্দ্রকে ৯৩,৫২০ কোটি টাকা মেটাতে ১০ বছর পাবে। ১০% একলপ্তে দেওয়ার পরে বাকিটা মেটাতে পারবে কিস্তিতে। তবে বিষয়টি নিয়ে মামলা করা কিংবা পুনর্বিবেচনার দাবি তোলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে এ দিন শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, বকেয়া মকুবের আর্জির কোনও সারবত্তা নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভোডাফোনের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারের ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ বলেছে, ‘‘এই আর্জি ‘ভুল ধারণার’ বশবর্তী হয়ে করা। এগুলি দেখে আমরা বিস্মিত। সত্যিই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। বহুজাতিক সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। আমরা মামলা খারিজ করব।’’ এমনকি সরকার টেলিকম সংস্থাগুলিকে সাহায্য করবে কি না, তার মধ্যে হস্তক্ষেপ করতেও অস্বীকার করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ইতিমধ্যেই ভি জানিয়েছে, টেলিকম বিভাগের কষা বকেয়ার হিসাব ঠিক নয়। তবে সুপ্রিম কোর্টে এ সব যুক্তি ধোপে টেকেনি।
ভি-র ঘাড়ে ছিল ১.৯৫ লক্ষ কোটি টাকার বকেয়া। সম্প্রতি প্রায় ৩৭,০০০ কোটি টাকা বকেয়া মকুব করে ৪৯% অংশীদারি হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। তার পরেও ৩০,০০০ কোটি টাকা মকুবের আর্জি জানিয়েছিল তারা। বলেছিল, বকেয়ার বোঝা পূরণ করে দৈনন্দিন কাজ চালানো যাচ্ছে না। কেন্দ্রের সাহায্য না পেলে আগামী মার্চের পরে পরিষেবা বন্ধ করে দেউলিয়া আদালতে (এনসিএলটি) যেতে হবে। সংস্থাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া অন্য পথ থাকবে না।
এ দিন সুপ্রিম কোর্ট এয়ারটেল ও টাটা টেলিসার্ভিসেসের বকেয়া মকুবের আর্জি খারিজ করলেও সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তাদের সমস্যা ভি-এর মতো ততটা প্রবল নয়। কাজেই তাদের গ্রাহকদের পরিষেবা পাওয়া নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)