কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান অয়েলের এলপিজি বটলিং কারখানার ঝামেলার ঠিক এক বছরের মাথায় প্রায় একই রকমের জটিলতা তৈরি হল কলকাতার উপকণ্ঠে বজবজ বটলিং কারখানায়। সিলিন্ডার সরবরাহকারী ট্রাক চালকদের একাংশ মজুরি বকেয়া থাকার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন। যার জেরে সোমবার থেকে সেখানে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার কাজ বন্ধ রয়েছে। এমনকি শনিবার অর্থাৎ ২৮ জুন সিলিন্ডার ভরা ট্রাকের একাংশ মঙ্গলবার পর্যন্ত কারখানার ভেতরেই রয়েছে। কারণ, সেগুলি বাইরে বার করতে দেননি আন্দোলনকারীরা।
চালকদের একাংশের অভিযোগ, চালক ও সহকারী মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জনের দু’বছরের বকেয়া মেটাননি মালিকপক্ষ। মঙ্গলবার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এই নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা, বজবজের দলীয় পর্যবেক্ষক জাহাঙ্গির খানের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তিনি সকলকে নিজের কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। কিন্তু বৈঠক ভেস্তে যায়। তার পরেই বেশ কিছু দুষ্কৃতী ওই চালকদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। এর ফলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, মারধর শুরু হয়। ভাঙচুর করা হয় ১১টির বেশি বাইক। ঘটনাস্থলে বজবজ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নামানো হয় র্যাফ। অভিযোগ, বেশ কিছু সিলিন্ডারের মুখ খুলে দেওয়া হয়। ফলে আসতে হয় দমকলকে।
ঘটনাস্থলে আসেন ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপার রাহুল গোস্বামী। অভিযোগ, পুলিশ লাঠি চালায়। আটক করা হয়েছে কয়েক জনকে। জাহাঙ্গির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে রয়েছি। পরে কথা বলব।’’ এ ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও মন্তব্য করতে চাওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসেবেই জাহাঙ্গির পরিচিত। পুলিশের দাবি, রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বজবজের এই কারখানায় দৈনিক ৪৫ হাজার সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়। সূত্রের দাবি, দু-তিন দিন ধরে নতুন কোনও সিলিন্ডার বাজারে না আসায় সল্টলেক, নিউটাউন-সহ উত্তর ২৪ পরগনার একটা বড় অংশ, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়ার একাংশে রান্নার গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার সমস্যা না মিটলে গ্রাহকদের সিলিন্ডার পেতে ৩-৪ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। ইন্ডিয়ান অয়েলের বক্তব্য, গত বছর সেপ্টেম্বরে মজুরি নিয়ে মালিকপক্ষ ও ট্রাক চালকদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সে ব্যাপারে কিছু সমস্যার কারণে সোমবার থেকে বজবজে কাজ বন্ধ। তবে আশা, ১-২ দিনের মধ্যে সমাধান হবে। বজবজের বদলে হলদিয়া, দুর্গাপুর, কল্যাণী, খড়্গপুর কারখানা থেকে সিলিন্ডার পাঠিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এতে গ্রাহকদের রান্নার গ্যাস পেতে কোনও সমস্যা হবে না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)