Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

পোকার আক্রমণে প্রশ্নের মুখে জিন বদলানো তুলো চাষ

পোকা ধরা ঠেকাতেই ২০০২ সালে জিন বদলানো তুলোর (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কটন বা জিএম কটন) চাষ শুরু হয়েছিল ভারতে। অথচ পঞ্জাব ও হরিয়ানায় সেই তুলোর চাষই মাথায় উঠেছে পোকার উৎপাতে।

চলছে তুলো চাষ।-পিটিআই

চলছে তুলো চাষ।-পিটিআই

মুম্বই ও নয়াদিল্লি, ১১ নভেম্বর শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০২:০২
Share: Save:

পোকা ধরা ঠেকাতেই ২০০২ সালে জিন বদলানো তুলোর (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড কটন বা জিএম কটন) চাষ শুরু হয়েছিল ভারতে। অথচ পঞ্জাব ও হরিয়ানায় সেই তুলোর চাষই মাথায় উঠেছে পোকার উৎপাতে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ক্ষতির পরিমাণ এতটাই যে, বেশ কয়েক জন কৃষকের আত্মহত্যার কারণ হিসেবেও দায়ী করা হচ্ছে এই ঘটনাকে। ইতিমধ্যেই তুলো প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের কাছে আর্থিক ত্রাণ দাবি করেছেন পঞ্জাব-হরিয়ানার সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিকেরা। যন্ত্রের সাহায্যে বীজ থেকে তুলো ছাড়ানোর এই সব কারখানা কর ও বিদ্যুৎ মাশুলে ছাড় দেওয়ার আর্জিও জানিয়েছে।

পরিস্থিতি যে-দিকে মোড় নিয়েছে, তাতে পোকা ঠেকাতে গবেষণাগারে তৈরি বীজ দিয়ে চাষ করার যে-পথে বছর তেরো আগে হাঁটতে শুরু করেছিল দেশ, তা আদৌ কতটা নিরাপদ, এ বার ফের সেই প্রশ্নই তুলছে বিভিন্ন মহল। ইতিমধ্যেই বহু কৃষক আর কোনও দিন জিএম কটন চাষ না-করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। অথচ বিশ্বের বৃহত্তম এই তুলো উৎপাদনকারী দেশে এখন বেশির ভাগটাই চাষ হয় জৈবপ্রযুক্তিগত ভাবে এই জিন বদলানো তুলোর বীজ দিয়ে। ক্ষতির ভার বইতে না-পেরে আত্মহত্যা করা এক কৃষকের বাবার অভিযোগ, ‘‘সমস্ত পুঁজি ঢেলে দিয়েছি সার কিনতে। যাতে গাছগুলো বাঁচানো যায়। কিন্তু সব বৃথা হয়েছে।’’

পঞ্জাব, হরিয়ানায় এই জিন বদলানো তুলো, বিটি কটন-এর উপর যে-সব পোকার আক্রমণে এমন বিপত্তি, সেগুলি হল আরশোলা প্রজাতির এক ধরনের ছোট মাছি। গত দু’বছরে হওয়া খরা এই পোকার বংশবৃদ্ধিতে উপযুক্ত পরিবেশ জুগিয়েছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। এমনিতে প্রযুক্তিগত ভাবে শুককীটের মতো পোকা মারার জন্য এ ধরনের তুলো গাছ নিজেই কীটনাশক তৈরি করে নিতে পারে। বাইরে থেকে ওষুধ দিতে হয় না। যে কারণে এই তুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন এর আগেও বহু বার উঠেছে। কিন্তু সাদা মাছির মতো এই কীটের থেকে নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা নেই বিটি কটনের। এমনকী এই মুহূর্তে এদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কৃষিক্ষেত্রে অনুমোদিত জৈবপ্রযুক্তি নির্ভর সমাধানও নেই। ফলে চাষিদের শুধুমাত্র অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শই দেওয়া হচ্ছে, তাতে কাজ হোক বা না-হোক।

পরিসংখ্যান বলছে, পঞ্জাব ও হরিয়ানা খুব বড় মাপের তুলো উৎপাদনকারী রাজ্য নয়। যে-কারণে শুধু এই দুই রাজ্যে বিটি কটনের উৎপাদন মার খাওয়ায় সার্বিক দেশীয় উৎপাদনকে তেমন বড়সড় ক্ষতি বইতে হবে না বলেই আশা কৃষিমহলের। কিন্তু এই ঘটনা শুধু তুলো নয়, জিন বদলানো যে-কোনও শস্য ব্যবহারের নিরাপত্তা ও যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, এই মুহূর্তে জিন বদলানো সর্ষে তৈরির প্রক্রিয়া চলছে গবেষণাগারে। চাষিদের কিছু সংগঠন অবশ্য ইতিমধ্যেই এর বিরোধিতা করে বিটি কটনে নিষেধাজ্ঞা জারি ও জিন বদলানো সর্ষের মতো শস্য আনার কর্মকাণ্ড থামানোর দাবি তুলেছে। অনেকে আবার গোটা ঘটনার জন্য আঙুল তুলছে খারাপ মানের সারের বিরুদ্ধেও। এ সংক্রান্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা।

তবে এত বিতর্কের মধ্যেও কিন্তু যে- সমস্ত সংস্থা জিএম কটনের বীজ বিক্রি করে তাদের যুক্তি, আখেরে তা চাষিদের সুবিধাই করে দেয়। কারণ, এতে ফলন হয় অনেক বেশি। তা ছাড়া, কীটনাশকের খরচও বেঁচে যায়।

সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব কটন রিসার্চের প্রধান বিজ্ঞানী দলীপ মোঙ্গা জানান, পাতা পিছু আট থেকে ১০টি পোকা আক্রমণ করলেই ক্ষতির পরিমাণ পোকা আটকানোর খরচকে ছাড়িয়ে যায়। যে কারণে ক্ষতির বোঝা চাপে চাষির ঘাড়ে। পঞ্জাব আগেই ৬৪০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে চাষিদের জন্য। একই পথে হাঁটার কথা ভাবছে হরিয়ানার কৃষি মন্ত্রকও।—সংবাদ সংস্থা

অন্য বিষয়গুলি:

genetically modified cotton b-cotton pest attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy