গত বছর সোনার দাম একের পর এক শিখর পার করেছিল। কী বিশ্ব বাজারে, কী দেশে। সেই দৌড় নতুন বছরেও অব্যাহত। সোমবার তৈরি হল নতুন নজির। এই প্রথম ১০ গ্রাম খুচরো সোনা (২৪ ক্যারাট) ৮৬,০০০ টাকার গণ্ডিও পেরিয়ে গেল। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, শুল্ক যুদ্ধের আশঙ্কা, তার জেরে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মতো যে কারণগুলি দামকে ঠেলে তুলছে, সেগুলির স্তিমিত হওয়ার লক্ষণ নেই। ফলে এই দৌড় কত দিন চলবে, প্রশ্ন থাকছেই। এ দিন কলকাতায় খুচরো সোনা ৬৫০ টাকা বেড়ে ৮৬,২০০ টাকা হয়েছে। জিএসটি নিয়ে ৮৮,৭৮৬ টাকা। গত ১ জানুয়ারি ছিল ৭৭,১৫০ টাকা (কর বাদে)। অর্থাৎ, ৪০ দিনেই ৯০৫০ টাকা বা ১১.৭৩% চড়েছে। গয়নার সোনা কর ছাড়া ৮১,৯৫০ টাকা, কর নিয়ে ৮৪,৪০৮। বিশ্ব বাজারেরও একই পরিস্থিতি। এ বছর এক আউন্স সোনা ১১% বেড়ে ২৯০০ ডলার হয়েছে। নজির সেটিও।
এতে বিপাকে পড়েছেন গয়নার ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীরা। গিনি এম্পোরিয়ামের ডিরেক্টর সমর দে বলেন, ‘‘বিয়ের মরসুম। প্রয়োজন না থাকলে ক্রেতা আসছেন না। অনেকেই কিনছেন হালকা গয়না।’’ বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলেন, ‘‘ছোট দোকানগুলির অবস্থা শোচনীয়। বিক্রি ৭০% কমে গিয়েছে। ১৫ মার্চের পরে বিয়ের মরসুম শেষ হলে কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’’
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, শেয়ার বাজারে দোলাচলের মধ্যে সোনার প্রতি লগ্নিকারীদের ভরসা সর্বজনবিদিত। কিন্তু বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কও ধাতুটির চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। শুধু গত বছরই তারা সোনার মজুত ১০৪৫ টন বাড়িয়েছে। লগ্নি গবেষণা সংস্থা একুইনমিক্স রিসার্চের প্রতিষ্ঠাতা জি চোক্কালিঙ্গম বলেন, ‘‘শুল্ক যুদ্ধ, আমেরিকার সুদ এবং বিশ্ব অর্থনীতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বাড়ছে। তাতে বিচলিত শেয়ারে লগ্নিকারীরা নিরাপত্তার খোঁজে ঝুঁকছেন সোনায়। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কও সোনা কিনে চলেছে। যা দাম বাড়াচ্ছে।’’
একাংশের ব্যাখ্যা, ২০১৮-এ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন শুল্ক যুদ্ধে নামেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল মূলত চিন-সহ কিছু দেশ। এই দফায় তিনি আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগীদেরও হুমকি দিয়ে বসেছেন। ফলে এই নিয়ে দরাদরি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। যা বিশ্ব বাজারকে আরও অস্থির করবে। তাই সোনার দৌড়ের গতি কবে কমবে, বলা কঠিন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)