Advertisement
E-Paper

শুল্ক-কাঁটা সরানোর পথে পেট্রোকেম

অবশেষে বকেয়া শুল্কের সমস্যা মেটার ইঙ্গিত। আর তার হাত ধরে সম্ভবত মালিকানা সংক্রান্ত শরিকি বিবাদও মিটতে চলেছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০২:০১

অবশেষে বকেয়া শুল্কের সমস্যা মেটার ইঙ্গিত। আর তার হাত ধরে সম্ভবত মালিকানা সংক্রান্ত শরিকি বিবাদও মিটতে চলেছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে।

সংস্থা সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এক মাসের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া। রাজ্য সরকারকে প্রাপ্য টাকা মিটিয়ে পেট্রোকেমে রাজ্যের শেয়ার কিনে নেবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল আগেই। কিন্তু সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২,২০০ কোটি টাকার বকেয়া শুল্ক। কেন্দ্রের কাছে রাজ্য এবং পেট্রোকেম কর্তৃপক্ষ এই দায় মেটাতে আরও সময় চেয়ে আর্জি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এক সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানা যাবে। দুই শরিকেরই আশা, তা হবে ইতিবাচক।

শুক্রবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান প্লাস্টিকস ফেডারেশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পেট্রোকেমের অন্যতম কর্তা সুভাষেন্দু চট্টোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান শেষে তিনি জানান, সংস্থার কাছে বকেয়া শুল্ক বাবদ ২,২০০ কোটি টাকা পায় কেন্দ্র। মূলত তার দায় থাকার কারণেই এত দিন শেয়ার হস্তান্তর আটকে রয়েছে। এ বার তা মিটে যাওয়ার পথে। তাঁর কথায়, ‘‘এক মাসের মধ্যেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। রফতানি সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য কেন্দ্রের কাছে চার বছর সময় চেয়েছি।’’

এই শুল্ক সমস্যার মূলে সংস্থার বেহাল আর্থিক দশা, একটা লম্বা সময় ধরে পেট্রোপণ্যের পড়তি বাজার এবং সংস্থা পরিচালনা নিয়ে রাজ্য ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দীর্ঘ আইনি বিবাদ। একই সঙ্গে ছিল, নানা কারণে অনিয়মিত উৎপাদনের সমস্যা। নিয়ম অনুযায়ী, কাঁচা মাল ন্যাপথা আমদানির জন্য শুল্ক ছাড় মেলে। কিন্তু তার শর্ত হল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য রফতানি করতে হবে সংস্থাকে। পেট্রোকেম তা মানতে পারেনি। বিদেশে তলানিতে থাকা চাহিদা দেখে সেই সময় টিকে থাকতে দেশের বাজারেই পণ্য বিক্রি করে সংস্থা। আর সেই নিয়ম ভাঙার মাসুল হিসেবেই তাদের গুনতে হবে প্রায় ২,২০০ কোটি। ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টালিজেন্স এ বিষয়ে নোটিস জারি করেছে গত ফেব্রুয়ারিতে। সুভাষেন্দুবাবুর কথায়, এই বকেয়া সংক্রান্ত সমস্যা এ বার মেটার মুখে। ফলে সম্ভবত মিটতে চলেছে মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যাও।

এরই সঙ্গে সংস্থার দাবি, এখন মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৯৫% পণ্য তৈরি হচ্ছে। শীঘ্রই তা ১০০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। সংস্থা বাঁচাতে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার পরে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাঙ্ক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি। হাজার কোটির এই মূলধনের দৌলতে কারখানা চালাতে অসুবিধা হচ্ছে না বলেই পেট্রোকেম কর্তৃপক্ষের দাবি।

সংস্থা সূত্রে খবর, মালিকানা বদলের প্রক্রিয়া শেষ হলে নতুন করে ঋণ পাওয়া সম্ভব হবে। শেয়ার হস্তান্তর শেষ হলে রাজ্যের কোষাগারেও আসবে ৬৫৩ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে মিটবে দীর্ঘকাল ধরে চলা বিবাদও।

এক সময় লগ্নির খরা কাটাতে পেট্রোকেমকেই অন্ধের যষ্টি করে এগোতে চেয়েছিল পূর্বতন বাম সরকার। সেই সময় রাজ্যের ঝুলিতে বিপুল কর্মসংস্থান ও অনুসারী শিল্প তৈরির মতো ইস্পাত বা গাড়ি শিল্পের বড় লগ্নি প্রস্তাব ছিল না। ফলে পেট্রো-রসায়ন ও তার সঙ্গে অনুসারী শিল্প গড়ার স্বপ্ন ঘিরেই তৈরি হয় হলদিয়া পেট্রোকেম। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর হাত ধরে বিদেশি বিনিয়োগ সেই স্বপ্নে অন্য মাত্রাও যোগ করেছিল তখন।

তবে গোড়া থেকেই প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগকে কেন্দ্র করে দানা বেঁধেছিল বিতর্ক। প্রথমে আরপিজি গোষ্ঠী, তার পরে দরবারি শেঠ। অবশেষে আর্থিক সংস্থার চাহিদা মেনে হাত বাড়ানো হয়েছিল বিদেশি বিনিয়োগের দিকে। আর সেই সূত্রেই প্রকল্পের অংশীদার হয়ে আসে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী।

প্রকল্প শেষ হয়েছিল ঠিক সময়েই। কিন্তু সংস্থার সমস্যা শুরু দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটের সময়। যার সূত্রপাত প্রকল্প শেষ করার জন্য ৯৬৯ কোটি টাকা বাড়তি ঋণ করা নিয়ে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, ৫,১৭০ কোটি টাকার প্রকল্পের ১,৯৭৯ কোটি আসবে শেয়ার বেচে। বাকি ৩,১৯১ কোটি তোলা হবে ঋণ করে। আরও স্থির হয়েছিল চ্যাটার্জি গোষ্ঠী ৪৩৩ কোটি, রাজ্য সরকার ৪৩৩ কোটি ও টাটা গোষ্ঠী ১৪৪ কোটি সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরে বাকি ৯৬৯ কোটি টাকা তোলা হবে বাজারে শেয়ার বিক্রি করে। কিন্তু সে সময়ে বাজারে টানা মন্দা ও প্রকল্পটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার কারণে শেয়ার বিক্রির রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই ৯৬৯ কোটি টাকাও তুলতে হয় ধার করে। প্রায় ১৭% সুদে নেওয়া ওই ঋণই জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে সংস্থার কাঁধে।

haldia petro chemicals time period finance ministry export obligation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy