দেশে আর্থিক পরিষেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলেও ডাক বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের কমতি নেই। সময়ে পরিষেবা না পাওয়া, অযথা হয়রানির মতো বহু অভিযোগ তো আছেই। সম্প্রতি তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জোর করে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট খোলানো বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা। যদিও ডাক বিভাগের দাবি, অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকের উপরে নির্ভরশীল। এই নিয়ে ডাক কর্মীদের নির্দেশিকাও দেওয়া নেই। কিন্তু গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন।
কলকাতা ও শহরতলির অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, সম্প্রতি ডাকঘরে কোনও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় টাকা তুলতে বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে গেলে কর্মীরা বা কিছু ক্ষেত্রে পোস্ট মাস্টারও নতুন যে কোনও প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট খুলতে বলছেন বা পরে আসতে বলছেন। অ্যাকাউন্ট না খুললে টাকা পেতে দেরি হবে বলেও জানানো হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগই বাধ্য হয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছেন। অনেক সময়ে কেউ বেশি টাকার একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে তাঁকে দিয়ে কম অঙ্কের একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলানো হচ্ছে।
ডাক বিভাগের অবশ্য দাবি, এ রকম নির্দেশিকা নেই। গ্রাহক নতুন অ্যাকাউন্ট খুলবেন কি না, সেটা তাঁর ব্যাপার। তবে সঞ্চয় প্রকল্প শেষে টাকা সেভিংস অ্যাকাউন্টেই পাঠানো হয়। ফলে ওই অ্যাকাউন্ট থাকতেই হয়। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের পোস্ট মাস্টার জেনারাল ঋজু গঙ্গোপাধ্যায় সাফ জানাচ্ছেন, ‘‘গ্রাহক হয়রানি বরদাস্ত করা হবে না। অ্যাকাউন্ট খুলতে বাধ্য করার লিখিত অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টারকে লিখিতভাবেই সতর্ক করা হয়। তার পরেও তিনি তেমন কিছু করলে সেটা লিখিত আদেশের অবমাননা। যার পরিণাম তাঁর বিরুদ্ধে অনুশাসনমূলক পদক্ষেপ।’’
কর্মী ইউনিয়নগুলির দাবি, এই অ্যাকাউন্ট খোলানো হয় মূলত সংশ্লিষ্ট ডাকঘরের টার্গেট পূরণের জন্য। এর সঙ্গে বিভাগের সরাসরি যোগ নেই। ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সংসদে অর্থ মন্ত্রক স্পষ্ট বলেছে, অ্যাকাউন্ট খুলতে চাপ দেওয়া হয় না। গ্রাহকদের অবশ্য বক্তব্য, কারণটা বড় কথা নয়। জোর করে অ্যাকাউন্ট না খুললে হকের টাকা পেতে দেরি হবে, তা মানা যায় না। বয়স্ক মানুষ দূর থেকে এসে হয়রান হচ্ছেন, সেটাও কাম্য নয়।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্মল সেভিংস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাসের অভিযোগ, ‘‘২০১৪ সালের হিসাবে একটি অ্যাকাউন্ট খুললে অর্থ মন্ত্রকের থেকে ২১৯.২৩ টাকা পেত ডাক বিভাগ। ফলে যত বেশি অ্যাকাউন্ট দেখানো যাবে, ততই বেশি টাকা মিলবে।’’ তবে তাঁর বক্তব্য, এ ভাবে খোলা বহু অ্যাকাউন্ট পরে চালু থাকে না। তা বন্ধও করা হয় না। ফলে বহু অ্যাকাউন্ট লেনদেন না হয়ে পড়ে আছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)