Advertisement
E-Paper

মানসিক রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য বিমা উদ্যোগ স্বাগত, কিন্তু প্রশ্ন বিস্তর

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২৫
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

হৃদরোগের সঙ্গে একই তালিকায় থাকবে মানসিক রোগ। বলা ভাল, রাখতেই হবে। কারণ, শারীরিক অসুখের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসাকেও বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনতে সম্প্রতি সাধারণ বিমা সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তির শ্বাস ফেলার আশা করছেন মানসিক রোগী ও তাঁদের পরিবার-পরিজনরা। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সংস্থা— সব পক্ষের মতেও এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। কিন্তু পরিষেবা মসৃণ করতে যে অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে, তা-ও মানছেন সকলে।

একাধিক বিশেষজ্ঞ সংস্থার কথায়, এই নির্দেশ জরুরি ছিল। কারণ, দেশে এখন মানসিক অবসাদ অন্যতম ব়ড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বাড়ছে অন্যান্য মানসিক রোগও। অথচ তাদের চিকিৎসার খরচই এত দিন বিমার তালিকায় রাখা বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে বিমা কিনে চিকিৎসা খরচ পাওয়ার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতেন অধিকাংশ জন। কারণ, গুটিকয় সংস্থায় এই পরিষেবা ছিল।

মনোরোগ চিকিৎসকদের দাবি, বছর পাঁচেক আগেই এই রোগকে বিমার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছিল। দেখা গিয়েছে, বিমার আওতায় থাকা মানুষও মানসিক রোগের শিকার হলে, চিকিৎসার জন্য কোনও আর্থিক সুযোগ পাচ্ছেন না।

শুরুর আশা

• বিমার চোখে একই সারিতে বসবে শারীরিক ও মানসিক রোগ।

• কমবে সামাজিক ছুৎমার্গ।

• কিছুটা হলেও কমবে খরচ চালাতে না পেরে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা। এ দেশে যার হার প্রায় ৭০ শতাংশ!

তবে খটকা

• চিকিৎসা খরচের হিসেব পাওয়া মসৃণ হবে তো? কী ভাবে ঠিক হবে প্রিমিয়ামের অঙ্ক?

• বিমা সংস্থার থেকে টাকা আদায় কী ভাবে?

• ডাক্তারি পরীক্ষার কারণে শারীরিক অসুস্থতার প্রমাণ যত পোক্ত, সব মানসিক রোগে তা নয়। বিমার টাকা পেতে অসুবিধা হবে না তো?

• বিমার তালিকায় থাকবে কোন কোন মানসিক রোগ?

• টাকা অপব্যবহার ঠেকাতেই বা নেওয়া হবে কী ধরনের পরিকল্পনা?

মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা জানাচ্ছেন, এ দেশে মানসিক রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার কারণ খরচ বইতে না পারা। মাঝপথে চিকিৎসা থেমে যায়। সে কারণে মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘আগেই মানসিক ও শারীরিক রোগকে এক সারিতে রাখা দরকার ছিল। বহু মানুষ আর্থিক কারণে চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে পারেন না।’’ বিশেষজ্ঞরাও মানছেন, এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। চট করে তা বন্ধ করাও যায় না। কিন্তু লম্বা সময় ধরে টানা চিকিৎসা করিয়ে যাওয়া এবং ওষুধ খাওয়ার সামর্থ আদপে থাকে কত জনের?

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবসাদের মতো মানসিক সমস্যায় মাঝেমধ্যে রোগীকে ভর্তি করতে হয়। কাউন্সেলিং, ডাক্তারের ফি, ওষুধ সব মিলিয়ে এক দিনে খরচ হতে পারে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো রোগে খরচ আরও বেশি। চিকিৎসক সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘‘মানসিক রোগীদের নিয়ে সামাজিক ছুৎমার্গ রয়েছে। সে জন্য অনেক সময়ই তাঁদের রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। তাই সবার আগে অবশ্যই এই সমস্ত রোগীদের চিকিৎসার খরচ নিশ্চিত করা জরুরি।’’

অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব নিয়ে মতভেদ না থাকলেও, কী ভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট রূপরেখা এখনও তৈরি হয়নি। স্টার হেল্‌থ অ্যান্ড অ্যালায়েড ইনশিওরেন্সের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা এস এন গুহ বলেন, ‘‘মানসিক রোগের চিকিৎসায় বিমার টাকা দেওয়ার অভিজ্ঞতা অধিকাংশ সংস্থার নেই। এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ প্রিমিয়ামের অঙ্ক ঠিক করা। চিকিৎসার খরচ জানতে হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

ম্যাগমা এইচডিআই ইনশিওরেন্সের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার অমিত ভাণ্ডারি বলেন, ‘‘বিমার আওতায় আনার পাশাপাশি মানসিক রোগ নিয়ে ছুৎমার্গ কাটানোর চেষ্টা জরুরি।’’ অন্তত সেই লক্ষ্যে এই নির্দেশ কার্যকরী হবে বলে সিগনা টিটিকে হেল্‌থ ইনশিওরেন্সের সিওও জ্যোতি পাঁজার আশা।

Health Insurance Mental Health Awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy