এক দিকে, সুদের হার কমানো। যাতে সাধারণ মানুষ কম খরচে ধার নিতে পারেন। অন্য দিকে, নগদ জমার অনুপাত কমিয়ে ব্যাঙ্কগুলির হাতে নগদের জোগান বাড়ানো। যাতে তারা আরও ঋণ দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই জোড়া দাওয়াইয়ের প্রয়োগে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে আবাসন ক্ষেত্র। বিশেষত সাধ্যের আবাসন (৪০ লক্ষ টাকার কম দামি) বিক্রি বাড়তে পারে। ঋণ পেলে বহু আবাসন সংস্থা আরও অনেক নতুন প্রকল্পও গড়বে। একাংশের দাবি, শুক্রবার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি আগামী দিনে আবাসন ক্ষেত্রের ছবিটা আমূল বদলে দিতে পারে।
আবাসন ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, গত ফেব্রুয়ারি থেকে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু এখনও গৃহঋণে সুদের হার সেই অনুপাতে কমায়নি ব্যাঙ্কগুলি। এ দিন আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র দ্রুত তাঁদের দেওয়া সুবিধা সাধারণ মানুষ এবং শিল্পের কাছে সুদ কমিয়ে পৌঁছে দিতে বলেছেন। ফলে আবাসন ক্ষেত্র মনে করছে এ বার ব্যাঙ্কের ঋণে সুদ কমতে বেশি দেরি হবে না। সঞ্জয়ের সতর্কবার্তা মাথায় রেখে আরবিআইয়ের কমানো সুদের পুরোটাই গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে। তখন চড়া সুদ দেখে যাঁরা মুখ ঘুরিয়েছিলেন, তাঁরা নতুন করে উৎসাহিত হবেন বলে আশা।
আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন ক্রেডাইয়ের সভাপতি শেখর পটেল জানান, ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শহরে সাধারণ মানুষের মধ্যে গৃহঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। কম দামি আবাসন বিক্রিতে গতি আসতে পারে। এর আগে ক্রেডাই বলেছিল, দেশে মূলত বিলাসবহুল আবাসন বিক্রি বাড়ছে। চড়া সুদের জের এবং চাহিদার অভাবে সাধ্যের আবাসন সব শহরেই ৫-১০ শতাংশ বার্ষিক হারে কমছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কম দামিগুলি না বিকোলে এই ক্ষেত্রের সার্বিক বৃদ্ধি হওয়া কঠিন।
ক্রেডাই ওয়েস্ট বেঙ্গলের সভাপতি সুশীল মোহতার দাবি, ‘‘কলকাতা-সহ রাজ্যে সাধ্যের আবাসন বিক্রি এ বার বাড়তে পারে। নির্মাতা সংস্থাগুলি ঋণ বেশি পেলে বহু থমকে থাকা প্রকল্প দিনের আলো দেখবে।’’ আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির আর এক সংগঠন নারেডকোর সভাপতি জি হরি বাবুর মতে, প্রথমবার এবং মধ্যবিত্ত ক্রেতারা এর ফলে অনেকটা সুবিধা পাবেন। পূর্তি রিয়েলটির এমডি মহেশ আগরওয়াল বলেন, ‘‘এই ঋণনীতি আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার জন্য যথেষ্ট। উৎসাহিত হবেন কম অঙ্কের ঋণগ্রহীতারা।’’ জৈন গোষ্ঠীর এমডি ঋষি জৈনের মন্তব্য, ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’পক্ষের হাতেই টাকার জোগান বাড়ায় সবচেয়ে লাভ হবে আবাসনের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)