মাঠে নেমেই মেরে খেলা। মঞ্চে প্রথম বক্তা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের খেলার এই ধাঁচেই শুরু হল রাজ্য সরকার আয়োজিত শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৭’। সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের অঙ্ক দাঁড়াল প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
শুক্রবার এই বিনিয়োগকে দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, সরকার হিসেবে নয়, বাংলাকে বরং পরিবার হিসেবে গণ্য করুন বিনিয়োগকারীরা। তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার ভাই-বোনের কাছে লগ্নি চাইছি।’’ গত বছর মমতা দাবি করেছিলেন, তাঁর সরকার শিল্পপতিদের কর্মী হিসেবে কাজ করবে। এ বার আর এক ধাপ এগিয়ে বিনিয়োগকারীদের ‘পরিবারের’ সদস্য হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।
এ দিন মিলন মেলা প্রাঙ্গনে শুরু হল শিল্প সম্মেলন। এ বার তা তৃতীয় বছরে পা দিল। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জাঁকজমক বাড়িয়ে শিল্পকর্তাদের সঙ্গে সংখ্যায় পাল্লা দিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ। বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্চিয়নের মেয়র থেকে শুরু করে জার্মানি, চিন, পোল্যান্ড, জাপান, ইতালি, নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধিরা। শিল্পমহলের তরফে ছিলেন ভারতী এন্টারপ্রাইজের রাকেশ ভারতী মিত্তল, ফিউচার গোষ্ঠীর কিশোর বিয়ানি, টিসিজি গোষ্ঠীর পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, হিরো সাইকেলের পবন মুঞ্জল, আরপিএসজি গোষ্ঠীর সঞ্জীব গোয়েন্কা, জেকে পেপারের হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়া, টিআইএলের সুমিত মজুমদারের মতো পরিচিত মুখ। কর্পোরেট জগতের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা গিয়েছে আইটিসির সঞ্জীব পুরী, গোল্ডম্যান স্যাক্সের সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, ব্ল্যাকস্টোনের গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ইনফোসিস কর্তা মোহনদাস পাই এবং আরও অনেককে।
কে কত
• আর পি সঞ্জীব ১০,০০০
গোয়েন্কা গোষ্ঠী
• গেইল ৬,৫০০
• গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জি ৬,০০০
• ভারতী গোষ্ঠী ৩,০০০
• টিসিজি গোষ্ঠী ১,০০০
• হিরো সাইকেল ৪০০
*লগ্নির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ফিউচার গোষ্ঠীও। তবে তার অঙ্ক জানায়নি
(হিসেব কোটি টাকায়)
অবশ্য উল্লেখযোগ্য ভাবে রাজনৈতিক মহলের ভিড় এ বছর তেমন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্যের চার মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার বাইরে রাজনৈতিক মহলের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গ প্রায় টানেননি মুখ্যমন্ত্রীও। বরং বিনিয়োগ টানতে তার শর্তই প্রাধান্য পেয়েছে বক্তব্যে। জমি, উন্নত পরিকাঠামো, উৎপাদিত পণ্যের বাজার, সহজে ব্যবসা করা, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, দক্ষ শ্রমিক ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা— লগ্নির এই প্রাথমিক শর্তগুলি উঠে এসেছে তাঁর মুখে। তবে নোট বাতিলের কথা উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘‘নোট নাকচের জেরে ঢিমেতালে চলছে অর্থনীতি। তবুও বলছি এখানে বিনিয়োগ করুন। কারণ ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত।’’
পরিসংখ্যান দিয়ে এ দিন মমতা জানান, গত পাঁচ বছরে রাজ্যের অর্থনীতির মাপ ৪.৬ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯.৫ লক্ষ কোটিতে। রাজ্যের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সওয়াল করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, গত ৬-৭ বছরে রাজ্যের চেহারা বদলেছে। বাংলা সত্যিই বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে উঠে এসেছে। যার উপকরণ হিসেবে এখানকার উপযুক্ত পরিকাঠামো, বিদ্যুৎ, দক্ষ শ্রমিক ও রাজনৈতিক স্থিরতার কথা বলেছেন প্রণববাবু।
লগ্নির প্রাথমিক শর্ত পূরণে রাজ্য যে সফল, তা জানিয়েছে শিল্পমহলও। পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীব গোয়েন্কা থেকে শুরু করে পবন মুঞ্জল, কিশোর বিয়ানি— সকলেই বলেন ব্যবসা করতে গিয়ে রাজ্যের শিল্পবান্ধব মুখই দেখতে পেয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy