কর ফেরত পেতে আয় কম দেখানো! ভারতীয় করদাতাদের একাংশের মধ্যে রয়েছে এই প্রবণতা। বিষয়টি নিয়ে এ বার তাঁদের সতর্ক করলেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, এই ধরনের ক্ষেত্রে বিষয়টি নজরে এলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নোটিস ধরাবে আয়কর দফতর। শুধু তা-ই নয়, দোষ প্রমাণ হলে জেল পর্যন্ত হতে পারে তাঁদের। আর তাই সংশোধিত আয়কর রিটার্ন দাখিলের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
এ দেশের বেতনভোগী কর্মীদের সাধারণ ভাবে আয়কর নিয়ে সে ভাবে চিন্তা করতে হয় না। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁদের আয় থেকে সঠিক হারে কর বাবদ কিছু টাকা কেটে নেয় নিয়োগকারী সংস্থা। এরই নাম ‘ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স’ বা টিডিএস। কিন্তু বেতন ছাড়াও কোনও ব্যক্তির আয়ের একাধিক উৎস থাকতে পারে। উদাহরণ হিসাবে শেয়ার বিক্রির মূলধনী লাভ বা বাড়ি ভাড়ার কথা বলা যেতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এই আয়ের উৎসগুলি নিয়োগকারী সংস্থাকে জানানো উচিত। তবেই উচ্চতর টিডিএস বা অগ্রিম কর জমা করতে পারবেন তিনি।
বর্তমানে দেশে দু’টি কর কাঠামো রয়েছে। একটি নতুন এবং অপরটি পুরনো। দু’টি ব্যবস্থাতেই আয়ের মাত্রা কত হলে কী হারে কর দিতে হবে, তা স্পষ্ট করেছে কেন্দ্র। দু’টি ক্ষেত্রেই করদাতাদের কিছু ক্ষেত্রে ছাড় বা রিবেট দিয়ে থাকে সরকার। ফলে টিডিএসে অতিরিক্ত টাকা কেটে নিলে সেটা ফেরত চাওয়ার অধিকার রয়েছে তাঁদের। আর তাই ভুয়ো তথ্য দাখিল করে ওই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন অসাধু করদাতারা।
কী ভাবে ভুয়ো তথ্য দাখিল করছেন করদাতারা? বর্তমানে আর্থিক লাভের আশায় পেশাদার কর বিশেষজ্ঞদের দ্বারস্থ হচ্ছেন বেতনভোগী কর্মীদের একাংশ। ফলে কখনও তাঁদের পরামর্শে বা নিজে থেকে রোজগারের অঙ্ক গোপন করার প্রবণতা ওই কর্মচারীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার কর কেটে নেওয়ার মিথ্যা তথ্যও পাঠাচ্ছেন আয়কর দফতরে। এর জেরে তৈরি হচ্ছে জটিলতা। সেই ফাঁক ধরা পড়লেই কড়া ব্যবস্থা নিতে আসরে নামছেন আয়কর আধিকারকেরা।
বার্ষিক আয়ের পরিমাণ সরকারকে জানাতে এ দেশের নাগরিকদের জমা করতে হয় আয়কর রিটার্ন। সেখানে তথ্য ওলট-পালট করার ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে। সূত্রের খবর, টিডিএসের অঙ্ক কম করতে কেউ কেউ বাড়ি ভাড়ার ভুয়ো রশিদ, রাজনৈতিক দল বা ট্রাস্টে অনুদান দেওয়া বা শিক্ষা ঋণ পরিশোধ হয়নি বলে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। বিশ্লেষকদের কথায়, এগুলির জন্য মোটা জরিমানা বা ওই ব্যক্তিকে জেলে পর্যন্ত যেতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সাল থেকে করের টাকা ফেরত চাওয়ার প্রক্রিয়া যাচাইয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি অবলম্বন করছে আয়কর দফতর। এতে করদাতার রিফান্ড দাবির সঙ্গে নিয়োগকারী সংস্থার দাখিল করা টিডিএস রিপোর্ট মিলিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। সেখানেই অসামঞ্জস্য ধরা পড়ছে বলে জানা গিয়েছে।