ঘোষণা করে না হলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের আবহাওয়াই তৈরি হল। ভারত শুধু পহেলগাম কাণ্ডের প্রত্যাঘাত করতে চেয়েছিল। করেওছিল ন’টি জঙ্গি ঘাঁটি গুড়িয়ে দিয়ে। পাল্টা হিসেবে মাটিতে এবং আকাশপথে আক্রমণ হানল পড়শি দেশ। তার পর থেকে সংঘর্ষ বড় চেহারা নিলেও পাকিস্তান বুঝতে পারছে তাদের অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে তা বেশি দিন টানা যাবে না। তবুও লাগাতার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা লঙ্ঘন করে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর হামলা চালিয়েছে তারা। ভারতও বদলে তাদের স্থলে, জলে এবং আকাশে আঘাত হেনেছে। এরই মধ্যে পাকিস্তানকে কয়েকশো কোটি ডলারের ঋণের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। চিন ও তুরস্কের থেকে কেনা সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করছে তারা। তবে ভারত পড়শি দেশটির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর। সামরিক এবং আর্থিক উভয় দিক দিয়েই। ফলে সংঘর্ষ শেষে পড়শি দেশটিরই বেশি ক্ষতি হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
যুদ্ধের প্রভাব অবশ্যই পড়ে জনজীবন ও অর্থনীতিতে। যা অনুভূত হচ্ছে ভারতের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে। বিমানবন্দর বন্ধ ও যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় পর্যটন, হোটেল, বিমান শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে। পাকিস্তান তো বটেই, বাংলাদেশের সঙ্গেও বাণিজ্য প্রায় স্তব্ধ। যুদ্ধ লম্বা হবে না ধরে প্রথম দিকে শেয়ার বাজারে তেমন বড় পতন দেখা যায়নি। গোলাগুলি চললেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ১৬ দিন বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ভারতে পুঁজি ঢেলেছে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বাজার নামলেও, আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়নি। সূচক আরও পড়লে তা কম দামে লগ্নির সুযোগ তৈরি করবে। অর্থনীতির দিক থেকে ভারত এখন খুবই পোক্ত। অর্থাৎ সংঘর্ষ থামলেই বাজার উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই ব্রিটেনের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সেরেছে নয়াদিল্লি। যার ফায়দা তুলবে বহু ভারতীয় শিল্প। অন্য দিকে শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গেও কথা চলছে। আশা ভাল কিছু বেরোবে।
বিশ্ব জুড়ে কম সুদের আবহ তৈরি হচ্ছে। শুল্কের ডামাডোলে আমেরিকা এ দফায় সুদ না কমালেও, অর্থনীতির ধার বাড়াতে চিন গত সপ্তাহে সুদ ছেঁটেছে। ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডও তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। দেশে আজ জানা যাবে এপ্রিলে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি কী ছিল। মার্চের তুলনায় (৩.৩৪%) তা আরও কমলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জোরালো কারণ থাকবে জুনে আরও অন্তত ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাই করার। বিশেষত বর্তমান পরিস্থিতিতে আরবিআই শিল্পের পাশে দাঁড়াতে চাইবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, পরিস্থিতি বিচার করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ৪০-৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এতে শিল্পের বিশেষ সুবিধা হবে। স্বস্তি পাবেন ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতারাও।
তবে এতে সমস্যা হবে সুদ নির্ভর মানুষের। ব্যাঙ্ক জমায় সুদ ইতিমধ্যেই কিছুটা কমেছে। জুনে আরবিআই ফের তা ছাঁটাই করলে জমার সঙ্গে সুদ কমতে পারে স্বল্প সঞ্চয়েও। এখনও তা না হওয়ায় ব্যাঙ্ক থেকে মোটা টাকা সেখানে যাচ্ছে। তাই ব্যাঙ্কিং শিল্পও চাইছে ডাকঘর প্রকল্পে সুদ কমাক কেন্দ্র। সেটা হলে তা কমবে ভারত সরকারের ফ্লোটিং রেট বন্ডে। অর্থাৎ, মে-র মধ্যেই মেয়াদি আমানতে টাকা রাখা ভাল।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)