কল-কারখানার চাকায় গতি ফেরাতে সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি আজ অনেক দিন ধরেই টানা করে আসছে শিল্পমহল। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে একই সওয়াল করছে কেন্দ্র। কিন্তু তা সত্ত্বেও চলতি মাসের শুরুতে হওয়া ঋণনীতি বৈঠকে সুদ কমানোর রাস্তায় হাঁটেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন ডিসেম্বরে পরের ঋণনীতিতেও সুদ কতখানি কমবে, তা নিয়ে সংশয়ী বিশেষজ্ঞরা এবং উপদেষ্টা সংস্থাগুলি।
এ প্রসঙ্গে জাপানি উপদেষ্টা সংস্থা নোমুরার যুক্তি, অক্টোবরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমে আসতে পারে ৩ শতাংশের নীচে। কিন্তু হলে তা হবে মূলত খাদ্যপণ্যের দাম কমার উপর ভিত্তি করে। সে ক্ষেত্রে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির হার সেই লক্ষ্যমাত্রার ৪ শতাংশের উপরে থাকারই সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে ৬ ডিসেম্বরের ঋণনীতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদ এক রাখার রাস্তায় হাঁটবে বলেই তাদের ধারণা। তবে উল্টো দিকে অনেকের আবার ধারণা, এই মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকায় শিল্প ও বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানোর কথা ভাবতেও পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
বৃদ্ধি তলানিতে। থমকে শিল্প। চাহিদায় ভাটা। রফতানি বাড়ন্ত। মুখ ফিরিয়ে বিদেশি লগ্নি। সে ভাবে তৈরি হচ্ছে না কাজের সুযোগও। অর্থনীতির বেহাল দশা নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সম্প্রতি আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ তৈরিতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিল্পের মন বুঝতে নতুন কমিটি তৈরিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রক। এক সময়ে অর্থ মন্ত্রকের তরফে ইঙ্গিত মিলেছিল ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণারও। এই অবস্থায় চাহিদার পালে বাতাস ফেরাতে এবং শিল্পের মূলধন জোগাড়ের পথ সুগম করতে সুদ ছাঁটাইয়ের কথা বারবার বলেছে কেন্দ্র। একই দাবি লাগাতার জানিয়েছে শিল্পমহলও। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির ফণা ফের মাথা তোলার ঝুঁকিই সেই পথে বাধা বলে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
গত ঋণনীতি ঘোষণার দিনে শীর্ষ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়েছিল, কৃষিঋণ মকুব ও প্রস্তাবিত ত্রাণ প্রকল্পের জেরে লাফিয়ে বাড়তে পারে রাজকোষ ঘাটতি। তা আবার উস্কে দিতে পারে মূল্যবৃদ্ধিকে। যে মূল্যবৃদ্ধি মাত্রাছাড়া হতে দিতে কোনও ভাবেই রাজি নয় তারা। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা, শুধু কৃষি ঋণ মকুব এবং প্রস্তাবিত ত্রাণ প্রকল্পের দৌলতেই রাজকোষ ঘাটতি বাড়তে পারে প্রায় এক শতাংশ। যা পাকাপাকি ভাবে ০.৫% বাড়িয়ে দিতে পারে মূল্যবৃদ্ধির হারকে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটে কৃষি ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতিকে অস্ত্র করে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি। পরে তা মকুব করেছে আরও কিছু রাজ্য। আর অনেকের অভিযোগ, নোটবন্দি আর তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর কারণে ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যেই কথা উঠেছে ত্রাণ প্রকল্প নিয়ে। কিন্তু এখন এই দুই কারণে মূল্যবৃদ্ধি মাত্রাছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা নির্মূল না-হলে সুদ কমানোর পথে হাঁটার সম্ভাবনা কম শীর্ষ ব্যাঙ্কের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy