মে মাসে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ২.৮২%। যা ছ’বছরের সর্বনিম্ন। মূল্যায়ন সংস্থা ক্রিসিলের ব্যাখ্যা, এটি অর্থনীতির পক্ষে ভাল লক্ষণ। কিন্তু পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যপণ্য এবং অশোধিত তেলের মতো স্পর্শকাতর পণ্য বাদে অন্যান্য পণ্য এবং পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির হার (কোর ইনফ্লেশন) আড়ালে-আবডালে মাথা তুলতে শুরু করেছে। টানা চার মাস তা রয়েছে ৪ শতাংশের উপরে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তা সামগ্রিক মূল্যবৃদ্ধিকেও ঠেলে তুলতে পারে।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, গত কয়েক মাস ধরে মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামাচ্ছে মূলত খাদ্যপণ্যের দামের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের আবহে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আজ ব্যারেলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম পৌঁছেছে ৭৯ ডলারের কাছে। ফলে ভাল বর্ষার প্রভাবে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, কোর ইনফ্লেশন ও জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী খরচের ধাক্কায় আগামী দিনে খুচরো ও পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার নতুন করে মাথা তোলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক মাস ধরে মূল্যবৃদ্ধি কমায় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তিন দফায় সুদের হার কমিয়েছে। যাতে বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন খুচরো ঋণের খরচ কমেছে। কমেছে শিল্প সংস্থাগুলির ঋণের সুদও। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সে দিক থেকে নজর সরিয়ে, আর্থিক কর্মকাণ্ডের গতি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি ফের মাথাচাড়া দিতে থাকলে তাদের সেই পরিকল্পনা বিঘ্নিত হতে পারে।
ক্রিসিলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘কোর ইনফ্লেশনের মাথা তোলা এমনিতে দেশের বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষণ বলে মনে করা হয়। কিন্তু পরিসংখ্যানের গভীরে ডুব দিলে দেখা যাবে, এখনকার বৃদ্ধির মূল কারণ বিশ্ব অর্থনীতির দোলাচল। ঘরোয়া বাজারের সঙ্গে এর সম্পর্ক কম।’’ উদাহরণ হিসেবে তারা বলেছে, সোনার দাম সম্প্রতি প্রবল গতিতে বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে কোর ইনফ্লেশনে। কিন্তু এর সঙ্গে দেশের বাজারে চাহিদার তেমন সম্পর্ক নেই। তা বেড়েছে বিশ্ব বাজারের কারণেই। খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে সোনার গুরুত্ব ১.১%। এমন বেশ কিছু পণ্য আগামী দিনে প্রভাব ফেলতে পারে সেখানে।
রিপোর্ট বলছে
খাদ্য ও জ্বালানি ছাড়া বাকি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চড়ছে।
চার মাস ধরে তা ৪ শতাংশের উপরে।
যা চাপ বাড়াতে পারে খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে।
বিঘ্নিত হতে পারে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিকল্পনা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)