কৃত্রিম মেধা (এআই) থেকে মেশিন লার্নিং বা কোয়ান্টাম। ধাপে ধাপে উন্নত হতে থাকা প্রযুক্তি মানুষকে কর্মহীন নয়, বরং করে তুলবে আরও কর্মক্ষম— বৃহস্পতিবার এবিপি গোষ্ঠী আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলন ‘ইনফোকম’-এর প্রথম দিনে প্রাপ্তি এটাই। প্রযুক্তি যে মানুষের বন্ধু বা সহকর্মী হতে পারে, তাতে একমত হলেন অ্যামাজ়ন ওয়েব সার্ভিসের কর্তা বিশ্বজিৎ মহাপাত্র কিংবা সেলসফোর্সের দক্ষিণ এশিয়ার সিইও অরুন্ধতী ভট্টাচার্য, রেডস ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান স্টিফেন ইবারাকি। অ্যাকসেঞ্চারের কর্তা ভাস্কর ঘোষ এক ধাপ এগিয়ে বার্তা দিলেন, শুধু শিল্পের নয় সরকারেরও উচিত আরও বেশি করে এআই-এর হাত ধরা।
বিশ্বজিতের দাবি, এআই চাকরি কাড়বে না। বরং পাঁচ বছরে ৮০% মানুষ কোনও না কোনও কাজে রোবট ব্যবহার করবেন। শীঘ্রই মানুষ ও রোবটকে একসঙ্গে কাজও করতে দেখা যাবে। যা বর্তমানে ভাবাই যায় না। এআই-এর কারণে কাজ, কাজ করার ধরন ও কর্মী— সব কিছু বদলে যাবে। তিনি বলেন, “কম্পিউটার এবং ক্লাউড প্রযুক্তি আসার সময়ও সকলে ভাবছিলেন বহু কর্মীর চাকরি যাবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে কাজ ও তার ধরন বদলেছিল। এ বারও অন্যথা হবে না।” কৃত্রিম মেধাকে দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করার বার্তা দেন সিফি টেকনোলজিসের সিএমডি রাজু ভেগেসনা। তাঁর মতে, সে জন্য এই প্রযুক্তির খরচ কম হতে হবে, বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো জরুরি এবং তা হওয়া দরকার স্থিতিশীল।
তথ্য বলছে, এখন এআই ব্যবহার করছে ভারতের ৭২% সংস্থা। তবে সাফল্যের হার ৫০%। এই সূত্র ধরেই বিশ্বজিৎ-সহ সকলের দাবি, প্রযুক্তি কাজ কাড়ার বদলে কর্মীদের দক্ষতা বাড়াবে। লেনোভো-র এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কর্তা অমর বাবুর বক্তব্য, সামাজিক বৈষম্য দূর করায় গুরুত্ব ভূমিকা নিতে পারে এআই। যে কারণে অরুন্ধতী বলেছেন, ‘‘ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকারি ক্ষেত্রেও এআই বা কোয়ান্টামের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতিবাচক কাজ করা সম্ভব। এতে বহু মানুষকে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো পরিষেবা দেওয়া যাবে। সফল ভাবে চালানো যাবে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিও।’’ এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের জনধন যোজনার কথা উল্লেখ করে তাঁর দাবি, প্রযুক্তি ছাড়া তা সফল হত না। তবে স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্ণধারের সতর্কবার্তা, এআই-এর ব্যবহারে নজরদারি জরুরি। ব্যক্তিগত, কর্পোরেট সংস্থার পাশাপাশি সরকারি কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন ভাস্করও। তিনি তুলে ধরেছেন আলবেনিয়ায় এআই মন্ত্রী নিয়োগের কথা। তাঁর মতে, কর্মক্ষমতা বাড়াতে প্রতিটি দেশের এই পথ অনুসরণ করা উচিত।
এ বার ২৪ বছরে পা দিল ইনফোকম। এ দিন সম্মেলনের সূচনায় এবিপি গোষ্ঠীর সিইও ধ্রুব মুখোপাধ্যায় বলেন, “তিন দিন ধরে চলা আলোচনা আবর্তিত হবে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এবং তার পথ নিয়ে। তাই শিরোনাম ‘টেকনোলজি: ফিউচার ফরোয়ার্ড’। এ বার অর্থনীতিতে যে বিষয়ে গবেষণার জন্য নোবেল দেওয়া হয়েছে, সেটিকে মাথায় রেখেই স্থির হয়েছে মূল থিম।” গোটা বিশ্বের প্রযুক্তি কোন পথে হাঁটছে, তা নিয়ে তাবড় বিশেষজ্ঞরা কী ভাবছেন, এই মহাযজ্ঞে তা অনেকটা স্পষ্ট হবে বলেও মত তাঁর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)