প্রধানমন্ত্রী রবিবার জানিয়েছেন, সোমবার সূর্যোদয়ের পরেই সব জল্পনায় দাঁড়ি টেনে দেশবাসীর জন্য শুরু হবে ‘সাশ্রয়ের উৎসব’। সেখানে অত্যাবশ্যক পণ্য এবং ওষুধের পাশাপাশি কমবে বিমার খরচও। তার পরেই ফের প্রত্যাশায় বুক বাঁধেন বিমা গ্রাহকেরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, আজ প্রিমিয়ামে জিএসটি ১৮% থেকে কমে শূন্য হলেও তার পুরো সুবিধা পাওয়া যাবে না। পরে বিমা সংস্থাগুলিও জানায়, এর সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রাহকদের হাতে তুলে দেবে তারা। আর বিভিন্ন খরচে আগে মেটানো করের টাকা ফেরত (আইটিসি) না পাওয়ায় গুনতে হওয়া লোকসান নিজেরাই বইবে। সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি বিমা সংস্থা একযোগে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, বিমা শিল্প মোদী সরকারের চাপে আপাতত ক্ষতি স্বীকার করলেও, ভবিষ্যতে তা বহাল থাকবে তো? কত দিন ওই সুবিধা গ্রাহকদের দেওয়া হবে? পরে যে প্রিমিয়ামের অঙ্ক নিশ্চুপে আরও বেশি বাড়িয়ে ক্ষতি উসুল করা হবে না, তার নিশ্চয়তা কই? ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্র এই বিষয়ে নজরদারি করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু সেটা কত দিন, তার স্পষ্ট বার্তা নেই। ফলে আপাতত চালু হওয়া নিয়ে ধন্দ না থাকলেও পরে কোনও উপায়ে বিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়াম বাড়াবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিয়োরেন্সের এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিমায় গ্রাহকদের হাতে জিএসটি ছাড়ের সুবিধা তুলে দিচ্ছি। আইটিসি না পাওয়ায় ওই সব প্রকল্পের ব্যবসা চালাতে যে ক্ষতি হবে, তা তবে তা ঘাড়ে নিয়েই বৃহত্তর স্বার্থে প্রিমিয়াম বাড়াচ্ছি না।’’ একই দাবি আদিত্য বিড়লা হেল্থ ইনশিয়োরেন্সের সিইও মায়াঙ্ক বাথওয়ালের। তাঁর বক্তব্য, যারা শুধু স্বাস্থ্যবিমা বিক্রি করে, তারাই বেশি চাপে পড়বে। তবু সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন।
সাধারণ বিমা সংস্থা এইচডিএফসি আরগোর এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর পার্থনীল ঘোষের দাবি, ‘‘জিএসটি শূন্য হলে আইটিসি পাওয়া যায় না। তাই স্বাস্থ্যবিমা পরিচালনার খরচ বাড়বে। তবু আপাতত প্রিমিয়াম বাড়াচ্ছি না। আগে যে প্রকল্পে প্রিমিয়াম ছিল ১১৮ টাকা, তা আজ থেকে কমে হবে ১০০। তবে ভারতে চিকিৎসার মূল্যবৃদ্ধি বছরে ১৫%। সেই হার বাড়ছে কি না, তার উপরে আগামী দিনে প্রিমিয়ামের হার বাড়াব কি না, সেটা নির্ভর করবে।’’ কোটাক লাইফ ইনশিয়োরেন্সের পূর্বাঞ্চলের কর্তা অভিষেক চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ থেকে জীবন বিমাতেও কর না থাকার পুরো সুবিধা পাবেন গ্রাহক।যে সব প্রকল্পে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেগুলির নতুন প্রিমিয়ামের তালিকা সংস্থার দফতর এবং এজেন্টদের দেওয়া হয়েছে।
লাইফ ইনশিয়োরেন্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রে যে ১৮% দাম কমবে, এমনটা নয়। জীবন বিমা নিগম তালিকা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা-সহ জীবন বিমা প্রকল্প এবং পেনশন প্রকল্পে আগে থেকেই প্রথম বছরে ৪.৫% এবং দ্বিতীয় বছর থেকে ২.৫% কর বসত। এখন সেগুলি জিএসটি মুক্ত। দেরিতে প্রিমিয়ামের জন্য কাটা জরিমানাতেও কর লাগবে না।’’ উপদেষ্টা প্রাইসওয়াটার হাউস কুপার্সের বিমা বিভাগের পার্টনার অমিত রায়ের বক্তব্য, বিমা সংস্থাগুলি কী ভাবে ক্ষতি সামলায়, সেটাই দেখার। পরিচালনার খরচ কমাতেই হবে তাদের। এলআইসি-র বিপণন বিভাগের প্রাক্তন কর্তা অরূপ দাশগুপ্তের দাবি, ‘‘হিসাব বলছে, স্বাস্থ্যবিমা সংস্থার খরচ বাড়বে ৩%-৫%, জীবন বিমার ০.৫%-১.৫%।’’ বিশেষজ্ঞের একাংশের সতর্কবার্তা, এই অবস্থায় পুরনো প্রকল্পে প্রিমিয়াম না বাড়িয়ে চড়া প্রিমিয়ামের নতুন প্রকল্প বাজারে ছাড়া হচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)