রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক পাঁচ মাসে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির হাতে বাড়তি নগদ তুলে দিতে কমিয়েছে নগদ জমার অনুপাত, যা তারা আরবিআইয়ের ঘরে জমা রাখে। উদ্দেশ্য, ব্যাঙ্ক ঋণের চাহিদা বাড়ানো। এতে শিল্পমহল যেমন কম খরচে পুঁজি জোগাড় করতে পারবে লগ্নির জন্য, তেমনই ধার করে গাড়ি, বাড়ি বা ভোগ্যপণ্য কেনার ঝোঁকও বাড়তে পারে। তবে আর্থিক বিশেষজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, লগ্নির পরিসর তৈরি হলেও বাস্তবে ঋণ নিতে আগ্রহী হবে তো সংস্থাগুলি?
আরবিআই ঋণের মাসিক কিস্তি বা ইএমআইয়ের খরচ কমিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে কেনাকাটার জন্য অতিরিক্ত অর্থের ব্যবস্থা করছে। যাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে। এর হাত ধরে বাড়বে উৎপাদন। আর উৎপাদন বাড়াতে সংস্থাগুলিকে যে লগ্নি করতে হবে, সুদ কমায় সেই মূলধন তারা কম খরচে ঋণ নিয়ে জোগাড় করতে পারবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আমেরিকার চড়া শুল্কের নীতি আর্থিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। নেই দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে লগ্নি বৃদ্ধির জরুরি স্থিতিশীলতা। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ধন্দ রয়েছে। সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে, এতে ফের চড়তে পারে মূল্যবৃদ্ধির হার। আশঙ্কা, বহু ছোট-মাঝারি সংস্থারব্যবসায় তালা ঝুলতে পারে, ধাক্কা দিতে পারে উৎপাদন। ফলে সুদ কমলেও, ঋণের বোঝা সংস্থাকে বিপাকে ফেলতেপারে বলে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার জেরেই প্রশ্নের মুখে শিল্পের ঋণ বৃদ্ধি।
স্টেট ব্যাঙ্কের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সৌম্যকান্তি ঘোষ মনে করেন, আরবিআইয়ের লক্ষ্য দীর্ঘ মেয়াদেআর্থিক বৃদ্ধির জন্য মূলধনের ব্যবস্থা করা। সুদ কমায় ৫০,০০০-৬০,০০০ কোটি টাকা ঋণগ্রহীতাদের হাতে থাকবে। যা দিয়ে কেনাকাটা ও লগ্নি বৃদ্ধি সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকেরধারণা, সব থেকে বেশি ঋণের চাহিদা বাড়বে ছোট-মাঝারি শিল্পে। তাদের সুদও দ্রুত কমার কথা। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি তাদের ধার দিতে চায় না ঝুঁকির কারণে। দিলেও সুদ চড়িয়ে রাখে। বড় সংস্থাগুলির তেমন ঋণ প্রয়োজন নেই। কারণ তাদের হাতে নগদ রয়েছে। ফলে সুদ ছাঁটাইয়ের প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকতে পারে খুচরো বাজারে কেনাকাটাতেই। শিল্পের লগ্নি বাড়বে সামান্য।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)