E-Paper

প্রায় আড়াই হাজার ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড, আছে স্থায়ী আমানত, সরকারি বহু প্রকল্পও! সঠিক বিনিয়োগ কোনটি?

লগ্নিযোগ্য তহবিলের আকার বড় হলে সমস্যা আরও বেশি। ঠিক বুঝতে না পেরে কিছু টাকা অনেক সময়ে ভুল জায়গাতেও রাখা হয়ে যায়। তা হলে লগ্নি করবেন কোথায়?

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৩৫

—প্রতীকী চিত্র।

বাজারে এখন লগ্নি প্রকল্পের ছড়াছড়ি। সম্পূর্ণ সুরক্ষিত সরকারি প্রকল্প, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের জমা প্রকল্প, আস্থা রাখা যায় এমন বেসরকারি প্রকল্প, সম্ভাব্য উঁচু আয় এবং সঙ্গে মাঝারি থেকে উঁচু ঝুঁকি আছে এমন প্রকল্প। আছে লোভনীয় আয়ের ফাঁদ পাতা অসাধু প্রকল্পও। যদি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখা মনস্থ করেন, তা হলে সেখানেও হাজারও প্রকল্প রয়েছে। এত প্রকল্পের ভিড়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে যান অনেকেই। লগ্নিযোগ্য তহবিলের আকার বড় হলে সমস্যা আরও বেশি। ঠিক বুঝতে না পেরে কিছু টাকা অনেক সময়ে ভুল জায়গাতেও রাখা হয়ে যায়। তা হলে লগ্নি করবেন কোথায়?

এই সমস্যা থেকে বার হতে প্রথমে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে হবে। যেমন, কী চান? সম্পূর্ণ সুরক্ষিত প্রকল্প, নাকি অল্প ঝুঁকি থাকলেও চলবে? নিয়মিত আয় নাকি বৃদ্ধি? ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ ও ইচ্ছা কতটা? এই সব প্রশ্নের উত্তর পেলে প্রকল্প বাছাই শুরু করা যায়। কোন সময়ে লগ্নি করা হচ্ছে, তারও একটা বড় গুরুত্ব আছে প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। যেমন বাজারে এখন কেমন সুদ যাচ্ছে, সামনে বৃদ্ধি কিংবা হ্রাসের সম্ভাবনা আছে কি না, শেয়ার বাজারের অবস্থা, ইত্যাদি।

কোন প্রকল্প কাদের জন্য?

  • যাঁরা সুরক্ষার সঙ্গে কোনও মতেই আপস করতে চান না, আয় কম হলেও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত প্রকল্পই পছন্দ তাঁদের গন্তব্য হওয়া উচিত সরকারি ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং বিভিন্ন সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নথিভুক্ত সব বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কেই ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা বিমাকৃত। তাই এই পরিমাণ টাকা ছোট ব্যাঙ্কে রেখে সুরক্ষার পাশাপাশি একটু বেশি সুদ পাওয়া যেতে পারে।
  • যাঁদের মাসিক অথবা নিয়মিত আয় প্রয়োজন, তাঁরা টাকা রাখতে পারেন ডাকঘরের মাসিক আয় প্রকল্পে (এমআইএস)। ব্যাঙ্কে মাসিক আয়ের মেয়াদি আমানত কিংবা সুরক্ষা যাচাই করে এনবিএফসি-র আমানত প্রকল্পেও পুঁজি রাখা যেতে পারে। যাঁদের অল্পবিস্তর ঝুঁকিতে আপত্তি নেই তাঁরা ভাল মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রেখে এসডব্লিউপি পদ্ধতিতে মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। তিন মাস এবং ছ’মাস অন্তর আয় আসতে পারে যথাক্রমে সিনিয়র সিটিজ়েন্স সেভিংস স্কিম এবং ভারত সরকারের পরিবর্তনশীল সুদযুক্ত ঋণপত্রে।
  • যাঁরা উঁচু করের আওতায় পড়েন তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারে পিপিএফ, কর ছাড় পাওয়া যায় এমন জীবন বিমা। ভাবা যেতে পারে শেয়ার এবং শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডের কথা, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভের প্রথম ১.২৫ লক্ষ টাকা পুরোপুরি করমুক্ত এবং তার অতিরিক্ত লাভে কর বসে মাত্র ১২.৫%।
  • যাঁরা পরোক্ষ ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি করতে চান তাঁরা টাকা রাখতে পারেন মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডে। যাঁরা পরোক্ষ পথে সোনা ও রুপোতে টাকা লাগাতে চান তাঁদের জন্য রয়েছে গোল্ড অথবা সিলভার ফান্ড কিংবা ইটিএফে।
  • বড় মেয়াদে পেনশন তহবিল গড়ে তোলা যাঁদের লক্ষ্য, তাঁদের চোখ থাকুক পিপিএফ অথবা এনপিএস-এ। যাঁরা মাসিক ভিত্তিতে অল্প করে জমিয়ে লম্বা মেয়াদে বড় তহবিল গড়তে চান, তাঁরা এসআইপি-র সুবিন্যস্ত একুইটি ফান্ডে টাকা রাখতে পারেন।
  • যাঁরা শেয়ার বাজার বোঝেন ওঝুঁকিতে আপত্তি নেই, তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে সম্পদ তৈরির লক্ষ্যে সূচক মাঝে মধ্যে নামলে বাছাই করা ভাল শেয়ার অল্প অল্প করে কিনতে পারেন।
  • প্রবীণদের শ্রেষ্ঠ লগ্নির জায়গা সিনিয়র সিটিজ়েন্স সেভিংস স্কিম। সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর সুদ পাওয়া যাচ্ছে ৮.২% হারে।
  • লগ্নির টাকা সহজে ভাঙানো যায়, এমন প্রকল্প খোঁজেন অনেকে। মেয়াদ শেষের আগে ব্যাঙ্ক এফডি ভাঙানো সহজ। তবে তাতে মাসুল দিতে হতে পারে। সেই লোকসান কমাতে ভেঙে ভেঙে কয়েকটি এফডি করা যেতে পারে। যাতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ভাঙানো যায়। বাকি টাকায় পুরোনো হরেই সুদ আসতে থাকবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Invest Mutual Fund

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy