Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
চেয়েও মিলল না আপৎকালীন পুঁজি, আপাতত গোটাচ্ছে ডানা

কিংফিশারের পথেই কি জেট?

জেটের ঘাড়ে এই মুহূর্তে ৮,৫০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের অন্তত তিন মাসের বকেয়া বেতন। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানগুলির টিকিটের দামও।

নিজস্ব প্রতিবেদন 
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

প্রতিশ্রুতি ছিল স্বপ্নের উড়ান যাত্রার। আর স্লোগান ‘দ্য জয় অব ফ্লাইং’। এই নিয়েই আড়াই দশক আগে ডানা মেলেছিল জেট এয়ারওয়েজ। শুরুতে ঘরোয়া উড়ানের পরে চালু হয়েছিল আন্তর্জাতিক পরিষেবা। কিন্তু পুঁজির অভাবে বুধবার গুটিয়ে ফেলতে হল সেই ডানাই। অন্তত সাময়িক ভাবে। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় ২০,০০০ পরিবার। ফলে প্রশ্ন উঠছেই, জেটের ভবিষ্যৎও কি হতে চলেছে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের মতো? যে সংস্থা ২০১২ সালে বন্ধ হয়েছে পাকাপাকি ভাবে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই প্রাক্তন কিংফিশার-কর্তা বিজয় মাল্য টুইটে জেট প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গয়াল ও তাঁর স্ত্রী অনিতার উদ্দেশে সমবেদনা জানিয়েছেন।

জেটের ঘাড়ে এই মুহূর্তে ৮,৫০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের অন্তত তিন মাসের বকেয়া বেতন। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানগুলির টিকিটের দামও। ফলে অনেকে মনে করছেন, নতুন করে কেউ পুঁজি না ঢাললে এর পরে জেটের চাকা কোন পথে গড়াবে তা বলা বেশ কঠিন। এই বোঝা মাথায় নিয়ে সংস্থা আপাতত তাকিয়ে নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে। যার ফলাফল বুঝতে এখনও অন্তত দু’তিন সপ্তাহ বাকি।

বুধবার সন্ধ্যায় জেট এয়ারওয়েজ বিবৃতি দিয়ে জানায়, পুঁজির অভাবে আপাতত পরিষেবা স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে তারা। রাতে তাদের শেষ উড়ানটি চলেছে। গিয়েছে দিল্লি থেকে অমৃতসর। এ দিন রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জেটের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক চলেছে।

ভ্রমণ সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করা গয়াল ১৯৯২ সালে চালু করেছিলেন জেট এয়ারওয়েজ। যা প্রথম বার আর্থিক সমস্যার মুখে পড়ে ২০১০ সালে। সেই দফায় ধাক্কা সামলাতে পেরেছিলেন গয়াল। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। উড়ান যুদ্ধে সস্তা টিকিটের প্রতিযোগিতার পাশাপাশি জ্বালানির দাম-সহ পরিষেবার খরচ বাড়ছিল উত্তরোত্তর। জেটের ধমনীতে রক্ত চলাচল কমতে শুরু করেছিল তখন থেকেই। পর পর চারটি ত্রৈমাসিকে ক্ষতির মুখ দেখতে হয় তাদের। বাকি পড়ছিল তেল সংস্থাগুলির টাকা। ঋণদাতাদের বকেয়াও। সেই সঙ্গে বিমান ভাড়া দেওয়া সংস্থাগুলির লিজের টাকা, কর্মীদের বেতনও বকেয়া পড়ছিল। টাকা বাকি থাকায় একাধিক বার জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তেল সংস্থাগুলি। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল এ ভাবেই। ফলে আশঙ্কা বাড়ছিল গত কয়েক দিন ধরে।

শেষ পর্যন্ত মার্চে ১ টাকার বিনিময়ে জেটের ৫১% অংশীদারি হাতে নেয় স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতাদের গোষ্ঠী। সিদ্ধান্ত হয়, চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাবেন গয়াল। কমে যাবে তাঁর অংশীদারি। শেয়ার কমবে আরেক অংশীদার এতিহাদেরও। শুরু হয় ঋণদাতাদের হাতে থাকা অংশীদারির নিলাম প্রক্রিয়া। পাশাপাশি কথা ছিল, আপাতত পরিষেবা চালাতে ১,৫০০ কোটি টাকা দেবে ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই টাকাই শেষ পর্যন্ত মেলেনি। আপৎকালীন পুঁজি হিসেবে ব্যাঙ্কের কাছে ৪০০ কোটি টাকা চায় জেটের ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে ঋণদাতারা তাদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে বলে এ দিন বিবৃতি দিয়ে জানায় উড়ান সংস্থাটি। ফলে আপাতত পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর পথ খোলা নেই বলেও জানায় তারা। রাতে সংস্থার সিইও বিনয় দুবে জানান, অংশীদারি হাতবদলের সময়ে কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই প্রশ্নের উত্তরও এখন তাঁদের কাছে নেই।

গত পাঁচ বছরে দেশে অন্তত সাতটি বিমান সংস্থা পরিষেবা গুটিয়েছে। তার আগে পরিষেবা বন্ধ করেছে আরও কয়েকটি। এর মধ্যে রয়েছে দামানিয়া, মোদিলুফৎ, সহারা, এয়ার ডেকান, কিংফিশার। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, ছোট শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে বিমানবন্দর ও পরিকাঠামো তৈরি করছে কেন্দ্র। এই অবস্থায় জেটের মতো একটি সংস্থার এক দিনের জন্য ডানা গোটানোও তো ইতিবাচক ইঙ্গিত নয়! এয়ার ইন্ডিয়ার সিএমডি অশ্বিনী লোহানির বক্তব্য, ‘‘সাময়িক হলেও জেটের এই ঝাঁপ বন্ধ হওয়া দেশের বিমান পরিষেবা ব্যবসায় বড় ধাক্কা।’’ বিমান মন্ত্রক অবশ্য বলেছে, সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর পরিকল্পনায় সব রকম সাহায্য করবে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jet Airways Naresh Goyal SBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE