শ্রমিকদের বকেয়া মেটাতে হবে, এই শর্তে উত্তরবঙ্গে সাতটি চা বাগান চালানোর জন্য ডানকান গোষ্ঠীকে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি গিরীশ গুপ্ত ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ ছাড়া তাদের আরও দু’টি শর্ত দিয়েছে। সেগুলি হল: ১) কী ভাবে চা বাগান চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রতি ১৫ দিন অন্তর টি বোর্ডকে রিপোর্ট দিতে হবে ডানকান গোষ্ঠীকে। ২) চা বাগানের যন্ত্রপাতি তারা সরাতে পারবে না।
কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ এ দিন জানান, ডানকানের ১৪টি চা বাগানের মধ্যে ৭টি হস্তান্তরের লক্ষ্যে ২৮ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ ওই বিজ্ঞপ্তির উপরে অবশ্য কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি।
এ দিনের রায়ের পরে ডানকান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান জি পি গোয়েন্কা জানান, বাগান পরিচালনার বিষয়ে সেখানকার বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে তাঁরা শীঘ্রই কর্মী, ইউনিয়ন ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি জানান, এখন বাগানগুলিতে ম্যানেজার পদে কেউ নেই। নতুন ম্যানেজার নিয়োগ করবেন তাঁরা। ডানকান-কর্তার দাবি, ‘‘আগে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু বাগান বন্ধ ছিল না। আর বাগান পরিচালনায় আমাদের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ দিনের।’’ শ্রমিকদের বকেয়ার প্রশ্নে তিনি জানান, এ নিয়ে তাঁরা ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে চুক্তি করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সাতটি বাগানে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের অঙ্ক প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, অধিগ্রহণ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির পরে বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, ওই ৭টি (বীরপাড়া, গরগণ্ডা, লঙ্কাপাড়া, তুলসীপাড়া, হান্টাপাড়া, ধুমচিপাড়া ও ডিমডিমা) ‘রুগ্ণ’ বাগানের পরিচালনভার নতুন সংস্থাকে হস্তান্তরিত করা হবে। সংস্থা নির্বাচনের জন্য এরপর টি বোর্ড দরপত্রও আহ্বান করেছিল।
এ দিকে কৌশিকবাবু জানান, ডিভিশন বেঞ্চে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, চারটি চা বাগান চালানোর জন্য টি বোর্ড চারটি সংস্থাকে নির্বাচন করে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। কেন্দ্র তা অনুমোদনও করেছে। ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের বক্তব্য নথিভুক্তও করেছে।
ডানকানের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র এ দিন জানান, অধিগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রের ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করেই তাঁরা মামলা করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে। টি বোর্ডের আইনজীবী তিলক বসু উল্লেখ করেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তারা এ কথাও জানিয়ে দিয়েছে, যে-কোনও পক্ষই এই মামলা নিয়ে পুজোর ছুটির পরে আদালতে বক্তব্য জানাতে পারবে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে মামলা করে ডানকান গোষ্ঠী। ১৫ মার্চ স়ঞ্জীববাবু তাঁর রায়ে জানান, বৈধ কারণেই উত্তরবঙ্গে ডানকানের সাতটি চা বাগান হস্তান্তর করতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কেন্দ্র। ওই রায়ের অব্যবহিত পরেই বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ফের মামলা করে ডানকান গোষ্ঠী।
তবে এ দিনের নির্দেশেও সঙ্কট কতটা কাটবে তা নিয়ে সন্দিহান শ্রমিক সংগঠনগুলি। ডানকান-কর্তার কথাতেও সেই নিশ্চয়তা মেলেনি। গোয়েন্কা বলেছেন, ‘‘চেষ্টা করব।’’ শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রশ্ন, একবার হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের পরে কেন একই সংস্থাকে বাগান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হল?