Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Labour Union

অবাধ কর্মী ছাঁটাইয়ের বিধি, তোপ সরকারকে

চড়া বেকারত্বের অসুখে ইতিমধ্যেই ধুঁকতে থাকা কাজের বাজার এর জেরে কঙ্কালসার চেহারা নেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:১৮
Share: Save:

শুধু বামপন্থী কিংবা কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির কর্মী সংগঠন নয়। অবাধ কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তা মসৃণ করতে চেষ্টার কারণে লোকসভায় সদ্য পেশ হওয়া তিন শ্রম বিধির উপরে ক্ষুব্ধ সঙ্ঘের ট্রেড ইউনিয়ন বিএমএস-ও।

প্রায় সমস্ত কর্মী সংগঠনের অভিযোগ, সামাজিক সুরক্ষার ‘নামমাত্র আশ্বাসে’ বন্দোবস্ত হচ্ছে চাকরির ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও কেড়ে নেওয়ার। দীর্ঘমেয়াদি কাজের সুযোগ তৈরির বদলে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে ঠিকা নিয়োগে। কমানো হচ্ছে প্রতিবাদের পরিসরও। চড়া বেকারত্বের অসুখে ইতিমধ্যেই ধুঁকতে থাকা কাজের বাজার এর জেরে কঙ্কালসার চেহারা নেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের কথায়, “এখন ১০০ জন পর্যন্ত কর্মীর সংস্থায় ছাঁটাই করতে বা ব্যবসা বন্ধের তালা ঝোলাতে সরকারি অনুমতি লাগে না। প্রস্তাব, সেই সংখ্যা ৩০০ করার। যেখানে নতুন প্রযুক্তির কারণে এমনিতেই নিয়োগ কম, চাকরি বাড়ন্ত, সেখানে কোন যুক্তিতে সরকার অবাধ ছাঁটাইয়ের রাস্তা খুলে দেয়, তা স্পষ্ট নয়।”

সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন মনে করেন, ভোটের আগে যে কর্পোরেট দুনিয়া নরেন্দ্র মোদীকে প্রচারের খরচ জুগিয়েছে, এই শ্রমিক বিরোধী বিল তাদের প্রতি নজরানা। তাঁর প্রশ্ন, “এ দেশে ৩০০ কিংবা তার কম কর্মীর সংস্থা ৭০%। সেখানে কাজ করেন ৭৪% কর্মী। এঁদের চাকরির নিরাপত্তা বলেই কিছু থাকবে না।”

ক্ষোভ

• কর্মী ছাঁটাই বা ব্যবসা গোটানোর জন্য কেন্দ্রের সায় লাগবে না ৩০০ জন পর্যন্ত কর্মীর সংস্থায়। অবাধ ছাঁটাইয়ের রাস্তা মসৃণ।

• অথচ বেকার ভাতা, বিমা নিয়ে নীরব প্রস্তাবিত সামাজিক সুরক্ষা।

• সামাজিক সুরক্ষার জাল সকলের জন্য নয়। চালু কবে, তাতেও ধোঁয়াশা।

• নিয়োগ, পদোন্নতি, ছুটি, ছাঁটাই— প্রায় প্রতিটি বিষয়ে বাধ্যবাধকতা কমবে সব কর্মীকে একই সুবিধা দেওয়ার।

• স্বল্প মেয়াদি ও ঠিকা নিয়োগে ঢালাও সুবিধা। ‘পাকা চাকরির’ কফিনে শেষ পেরেক।

• বাড়তে পারে দৈনিক কাজের সময়ও।

• ঠিকাদারদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় দুর্ভোগ বাড়বে পরিযায়ী শ্রমিকদের।

• বহু বিলই ‘পড়তে ভাল’। কিন্তু আইনি ফাঁক অজস্র। সেখানে সংসদ ও ত্রিপাক্ষিক বৈঠক এড়িয়ে নিয়ম বদলের পথ খোলা।

• প্রায় অসম্ভব আইন মেনে ধর্মঘট ডাকা।

শুধু ছাঁটাই নয়। এক্সএলআরআই-এর অর্থনীতির অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের মতে, বিলে অনেক বেশি নমনীয় নিয়োগ সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডার’। এখন মূলত এর জোরেই নিয়োগ, পদোন্নতি, ছুটি, ছাঁটাই— প্রায় প্রতিটি বিষয়ে একই রকম সুযোগ বা শর্ত পান সংস্থার সমস্ত কর্মী। নতুন আইনে সেই বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তাঁর আক্ষেপ, “অবাধ ছাঁটাইয়ের রাস্তা চওড়া হচ্ছে। অথচ প্রস্তাবিত সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে উল্লেখ নেই বেকার ভাতা কিংবা বিমার!”

বিলে পিএফ, ইএসআইয়ের মতো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে অ্যাপ-বরাতে কাজ করা ‘গিগ কর্মী’, এমনকি পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ, “এ প্রস্তাব শুনতে ভাল। কিন্তু বলা হয়েছে, সংস্থায় কর্মী অন্তত ১০ জন হলে এবং মাসে বেতন ১৮ হাজার টাকার মধ্যে হলে, তবে সুবিধা মিলবে। সুবিধা সকলের জন্য নয় কেন?”

এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউরের মতে, শিল্পপতিদের খুশি করতেই এই একতরফা আইন আনার চেষ্টা। আর ইনটাকের সাধারণ সম্পাদক জি সঞ্জীব রেড্ডির অভিযোগ, পরামর্শ কানে তোলা হয়নি জাতীয় শ্রম কমিশনেরই। সরকারি সূত্রে দাবি, ছাঁটাই ও ব্যবসা বন্ধের বিষয়ে শ্রম আইন শিথিল করলে, লগ্নি আসবে। চাহিদা বেশি থাকলে বেশি সাময়িক নিয়োগে ভরসা পাবে বহু সংস্থা। কিন্তু তাতে আমল না-দিয়ে চাকরির বাজার আরও নড়বড়ে করার অভিযোগেই কেন্দ্রকে দুষছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Labour Union Labour Law BMS Monsoon Session 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE