এ রাজ্যে লগ্নি আসার পথে জমি যে বড় বাধা, সে কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে শিল্প মহলের একাংশ। ফের সেই জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার ছবি উঠে এল বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষায়। তবে এখানে সমীক্ষার বিষয়বস্তু ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্প। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, জমির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের ছোট শিল্পকে পিছনে টেনে রেখেছে এক জানলা পদ্ধতির গলদও। শিল্প তৈরির জন্য দ্রুত বিভিন্ন ছাড়পত্র দিতে যা তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকার ওই পদ্ধতি রয়েছে বলে যে দাবি করে, তা ঠিক নয়। এই রিপোর্ট নিয়ে মতামত জানতে রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
দেশের কোন রাজ্যে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের ব্যবসা করার পরিবেশ কতটা সহজ, তাই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল বণিকসভাটি। সেখানেই উঠে এসেছে, এই ধরনের সংস্থাগুলির এগোনোর পথে মাথা তোলা বিভিন্ন বাধার কথা। যেমন, শিল্প তৈরির জন্য জমি নিতে গেলে বাংলায় একটি জমির দাম বিভিন্ন দফতরে আলাদা হয়ে যায়। তার ছাড়পত্র পেতে লেগে যায় দু’বছর পর্যন্ত সময়। জমির চরিত্র বদল করতেও লাগে অনেক দিন। চার বছর পর্যন্ত খরচ হয়ে যায় মিউটেশন করাতে। সব ক্ষেত্রেই এই সব সময় অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে এখানকার পরিবেশকে শিল্পবান্ধব বলা যায় না, দাবি রিপোর্টে।
ছোট উদ্যোগগুলির নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য যে এক জানলা পদ্ধতি আছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অ্যাসোচ্যাম। দাবি করেছে, এই পদ্ধতি সঠিক অর্থে এক জানলা নয়। কারণ, একাধিক জায়গা থেকে ১৪৫টি ছাড়পত্র নিতে হয়। সরকারি তথ্যেও স্বচ্ছতা নেই। ফলে বিষয়টি যে লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল, তা পূরণ হয় না। এমনকি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ছাড়পত্র নিয়ে জিজ্ঞাসা থাকলে তার যথাযথ উত্তর সরকারের থেকে মেলে না। তাই সংস্থাগুলিকে নতুন কারখানা তৈরির আগেই বড় সমস্যায় পড়তে হয়। কর্মী বা শ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ, লাইসেন্স রাজের সমস্যার কথাও উল্লেখ করাহয়েছে তাতে।
এই রিপোর্টে বণিকসভাটি রাজ্যকে একাধিক পরামর্শ দিয়েছে, যাতে শিল্পবান্ধব হওয়ার পথে এগোতে পারে বাংলা। এগুলি হল— ওড়িশার মতো একটি যথার্থ এক জানলা পদ্ধতি চালু করে শিল্প সংস্থাগুলিকে এক জায়গায় সব ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা। অনলাইনে ফায়ার লাইসেন্স প্রদান। নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের আলাদা একটি লাইসেন্স ইত্যাদি। অ্যাসোচ্যামের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্মল মিন্ডার কথায়, ‘‘শিল্পের সুবিধার জন্য আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। কারণ, একমাত্র তা হলেই দেশে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব। যা প্রতিটি রাজ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বাড়াবে। রাজ্যের এক শিল্পকর্তার কথায়, জমি ও শিল্প স্থাপনের জন্য ছাড়পত্র, এই দু’টি সব থেকে জরুরি। এই দু’টিই যথাযথ না হলে, সেই রাজ্য শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়বেই। বিশেষ করে ছোট শিল্পগুলিকে যত্নে লালন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তাদের পুঁজি অল্প। ফলে শুধু শিল্প সম্মেলন করলে হবে না। গোটা ব্যবস্থাকে ঠিক করতে হবে। তাঁর দাবি, এই রিপোর্টটিকে সরকারের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত এবং যথাযথ পদক্ষেপ করা উচিত। না হলে আরও পিছিয়ে পড়তে হবে, যা কাম্য নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)