গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে চর্মজাত পণ্য রফতানি টানা কমছে। এ জন্য রাজ্যের চর্ম শিল্পমহল আঙুল তুলছে মূলত মোদী সরকারের দিকে। অভিযোগ, কেন্দ্রের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ তাদের রফতানিতে আঘাত করছে। একাংশের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কম পুঁজিও অন্যতম বাধা। বহু রাজ্যে যেখানে চর্মজাত পণ্য উৎপাদন এবং রফতানি করে বড় সংস্থা, সেখানে এখানে জড়িত মূলত ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারিরা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তবু দেশে সর্বাধিক চর্মপণ্য বাংলা থেকেই রফতানি হয়।
শুক্রবার চর্মশিল্পের সংগঠন ইন্ডিয়ান লেদার প্রোডাক্টস অ্যাসো-সিয়েশনের সদস্য আদার সাহানি বলেন, ‘‘বছর দশেক আগেও এখান থেকে যতটা চামড়ার জিনিস রফতানি হত, তা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু তার পরেও এ ক্ষেত্রে শীর্ষে বাংলা।’’ তথ্য বলছে, এখন দেশ থেকে বছরে ৫৭০ কোটি ডলারের এই পণ্য যায়। তার ৪৮%-৪৯% বাংলার। ছিল প্রায় ৭৫%।
একাংশের আশঙ্কা, প্রথম স্থান এখনও হাতছাড়া হয়নি বটে। তবে এ ভাবে ব্যবসা কমলে আগামী দিনে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাংলা নিয়ে মোদী সরকারের মাথাব্যথা নেই। তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের পণ্য বেশি প্রচার পায়। এই পক্ষপাতিত্ব সমস্যার বড় কারণ। বাংলায় তৈরি জিনিস বিশ্ব বাজারে প্রচারের অভাবে পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে।’’ সূত্রের খবর, সমস্যা কাটিয়ে রফতানি বাড়াতে রাজ্যের সঙ্গে সংগঠনের কথা চলছে। আদারের দাবি, এ রাজ্যে চর্মপণ্য ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে পড়ছেন অর্থের জোর না থাকাতেও। বিদেশিরা মূলত তামিলনাড়ু বা উত্তরপ্রদেশ থেকে এই পণ্য কেনেন। এর অন্যতম কারণ, এখানে লগ্নির অভাব। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় এ ক্ষেত্রে সিংহভাগই ছোট সংস্থা। পুঁজি কম থাকায় পণ্যের মান উন্নত করতে পারছে না অনেকে। ফলেবিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও কিছু হাতেগোনা সংস্থার ব্যবসা সর্বভারতীয় মানের।’’
একাংশের দাবি, আমেরিকার চড়াশুল্কও সে দেশে চর্মজাত পণ্যে বাজার দখল কমাচ্ছে। তবে সংগঠনের সভাপতি অর্জুন কুলকার্নির দাবি, এতে ব্যবসায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম। কারণ, বেশি রফতানি হয় ইউরোপের নানা দেশে। ইউরোপীয় অঞ্চলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে তার সুফলও ঘরে আসবে। সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজর্ষি দে-র দাবি, শুল্কের প্রভাব রফতানিতে পড়তে পারে ৫%-৮%। তবে ঘরোয়া ও অন্যান্য দেশে চাহিদা ঘাটতি পোষাতে পারে। ২৮ অক্টোবর কলকাতায় চর্মশিল্পের প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করেছে সংগঠনটি।
রাজ্যের দাবি
বাংলা থেকে রফতানি ৭৫% থেকে নেমেছে ৪৮-৪৯ শতাংশে।
বিমাতৃসুলভ আচরণ করে কেন্দ্র। প্রচারের আলো পড়ে উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে উৎপাদিত পণ্যে।
এখানে চর্ম সংস্থাগুলির পুঁজি কম। ফলে পণ্যের মান বাড়ানো কঠিন হচ্ছে।
এখন চর্ম পণ্য রফতানিতে শীর্ষে বাংলা। তবে ক্রমশ রফতানি কমলে সেই স্থান রাখা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে।
শুধু কলকাতাতেই প্রায় ৩০০০ ব্যবসায়ী রফতানির সঙ্গে যুক্ত। কাজ করেন প্রায় ৫০ লক্ষ জন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)