Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হারাতে বসা মসলিন ফিরছে খাদির হাত ধরে

শুধু তাই নয়, ফের কাজে ফিরতে শুরু করেছেন নদিয়া, মুর্শিদাবাদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া মসলিন কাপড়ের শিল্পীরাও। খাদি পর্ষদের দাবি, অনেকেই রুটি-রুজির টানে খেত-মজুরের কাজ বা অন্য পেশায় নাম লিখিয়েছিলেন।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৪
Share: Save:

কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসা বাংলার সূক্ষ্ম সুতির মসলিন কাপড় আবার ফিরতে শুরু করেছে খাদির হাত ধরে। বছর পাঁচেক আগে সারা রাজ্যে যার ব্যবসা দাঁড়িয়েছিল সাকুল্যে সাড়ে তিন কোটি টাকা, গত অর্থবর্ষে তা-ই বেড়ে ছুঁয়েছে ৯০ কোটি। খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের দাবি, চলতি অর্থবর্ষে ব্যবসা ছাড়াতে পারে ১০০ কোটি। পরিস্থিতি বুঝে শিল্পীদের দিয়ে ৫০০-৬০০ কাউন্টের সুতোর মসলিন কাপড় তৈরি শুরু হয়েছে। আগে যেখানে ওই কাউন্টের সুতোর বোনা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল রাজ্যে।

শুধু তাই নয়, ফের কাজে ফিরতে শুরু করেছেন নদিয়া, মুর্শিদাবাদের প্রায় হারিয়ে যাওয়া মসলিন কাপড়ের শিল্পীরাও। খাদি পর্ষদের দাবি, অনেকেই রুটি-রুজির টানে খেত-মজুরের কাজ বা অন্য পেশায় নাম লিখিয়েছিলেন। সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ভাবে মসলিন কাপড় বিক্রির সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাড়তে থাকায় ৩০০০ শিল্পী ফের এই সুতিবস্ত্র বোনার কাজে ফিরেছেন। যাঁরা নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ছাড়াও মালদহ, বীরভূম, হুগলি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, হারিয়ে যেতে বসা মসলিনকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে খাদির সাফল্য এখানেই।

মুখ্যমন্ত্রীও মসলিন শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সূত্র ধরে শিল্পীদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর পাশাপাশি আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা, নতুন প্রযুক্তির লুম ও চরকার বন্দোবস্ত, মসলিনের নকশা ও বিপণনে জোর দেওয়া হয়েছে। ‘বিশ্ব বাংলা’-র মাধ্যমে চলছে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের কাজও। বিশ্ব বাংলার মুখ্য পরামর্শদাতা পার্থ কর বিশ্বাসের দাবি, গত গ্রীষ্মে তাঁরা ফ্রান্সে ভাল পরিমাণে মাসলিন কাপড় রফতানি করেছেন। সেখানে মসলিনের থান কাপড় থেকে নানা ধরনের পোশাক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসেছে আগামী গ্রীষ্মের বরাত।

খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৩০টির মতো সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র গড়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিল্পীরাই সুতো কাটা থেকে কাপড় বোনা-সহ সব কাজ করছেন এক ছাদের তলায়। প্রবীণ শিল্পীদের সাহায্যে তাঁতি পরিবারের নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সূক্ষ্ম মসলিন কাপড় বোনায় দড় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। যাঁরা ১০০-১৫০ কাউন্টের মোটা সুতি বস্ত্রের পাশাপাশি ৫০০ কাউন্টের কাপড়ও বুনতে পারবেন। তাঁতিদের গড়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁত ঘর। খাদির উদ্যোগে কলকাতায় ‘ক্লাব মসলিন’ ব্র্যান্ডের বিপণন কেন্দ্রও চালু করা হয়েছে।

মসলিন কাপড়ের নামের উৎস অবশ্য ভিন্‌ দেশে। ইতিহাস বলে, মেসোপটেমিয়াতে টাইগ্রিস নদীর ধারে মোসুল শহর অতি সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র তৈরিতে বিখ্যাত ছিল। সেই মোসুল থেকেই মসলিন। ঠিক ওই রকম সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র তৈরিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন এ দেশের তাঁত শিল্পীরাও। বুনন এমন ছিল যে, আস্ত একটা কাপড় আংটির ভিতর দিয়ে গলে যেতে পারত। সেই দক্ষতাই নতুন করে বাংলায় ফিরিয়ে আনা চেষ্টা চলছে, দাবি খাদি কর্তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muslin Cloth Khadi Biswa Bangla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE