সুসময়ে: দিল্লিতে অনুষ্ঠানে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে। ছবি: পিটিআই।
অস্কারের মঞ্চে কেট উইন্সলেটের গায়ে থাকে তাঁর নকশা করা হিরের গয়না। নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন, বেজিং থেকে মুম্বই, ‘নীরব মোদী’ ব্র্যান্ডের হিরের গয়নার বুটিক সর্বত্র। তাঁর নকশা করা অলঙ্কারের জন্য দুনিয়া খুঁজে আনা হয় দুষ্প্রাপ্য হিরে। দাম পৌঁছয় ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত। সদ্বিজ ও ক্রিস্টিজের নিলামেও ঘুরে ফিরে আসে তাঁর গয়না। যেমন, বছর আটেক আগে ক্রিস্টিজে তাঁর ব্র্যান্ডের গোলকোন্ডা নেকলেসের দর উঠেছিল ১৬.২৯ কোটি টাকা। সেই ধনকুবের নীরব মোদীর বিরুদ্ধেই এ বার প্রতারণার অভিযোগ আনল পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি)।
সিবিআইয়ের কাছে নীরব, তাঁর স্ত্রী, ভাই, মামা এবং তাঁদের অলঙ্কার সংস্থার বিরুদ্ধে জোড়া অভিযোগ দাখিল করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটি। একটি অভিযোগ গত মাসেই জমা পড়ে। প্রতারণার অঙ্ক ২৮০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার রাতে আর এক দফা অভিযোগ জমা পড়েছে। বুধবার পিএনবি শেয়ার বাজারকে জানিয়েছে, তারা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার শিকার, যা মোট পুঁজির প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। এক চিঠিতে অন্যান্য ব্যাঙ্ককেও প্রতারকদের ব্যাপারে সাবধান করেছে পিএনবি।
অর্থ মন্ত্রক এই সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পিএনবি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলির কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। তবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব লোক রঞ্জন বলেন, ‘‘প্রতারণার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।’’
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১১ সালে মুম্বইয়ে পিএনবি-র ব্র্যাডি হাউস শাখা থেকে কোনও নিয়মকানুন ছাড়াই বিরাট অঙ্কের ঋণের গ্যারান্টি হাতিয়ে নেয় নীরব ও তাঁর সংস্থা ফায়ারস্টার ডায়মন্ড। লক্ষ্য ছিল হংকং থেকে হিরে কেনা। যার মানে, টাকা মেটানো না হলে তার দায়িত্ব ব্যাঙ্কের। সেই নথি দেখিয়ে আবার এলাহাবাদ ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের হংকং শাখা থেকে ২৮০ কোটি টাকা ঋণ জোগাড় করেন নীরব। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই পিএনবি-কে ওই ২৮০ কোটি টাকা শোধ করতে হয়েছে।
সূত্রের খবর, গত ১৬ জানুয়ারি তিনটি হিরে সংস্থা পিএনবি-র কাছে ফের বিদেশ থেকে কেনা হিরের দাম মেটাতে একই রকম গ্যারান্টি পেতে দ্বারস্থ হয়। তিনটি সংস্থাই নীরব, তাঁর স্ত্রী অমি, ভাই নীরল ও আত্মীয় মেহুল চকসির। ব্যাঙ্ক কর্তারা নগদ বন্ধক রাখার দাবি করলে যুক্তি দেয়, এর আগে বন্ধক ছাড়াই তারা এই সুবিধা পেয়েছে। তখনই দেখা যায়, ওই ব্যাঙ্কের দুই অফিসার গোকুলনাথ শেট্টি ও মনোজ খারাট নিয়ম ভেঙে ঋণের গ্যারান্টি পাইয়ে দিয়েছিলেন। সিবিআই সূত্রে খবর, পিএনবি ১০ জন অফিসারকে সাসপেন্ড করেছে। প্রতারণার টাকার হাতবদল নিয়ে খোঁজে নেমেছে ইডি। ৩১ জানুয়ারি আয়কর দফতর নীরবের দিল্লি, সুরাত ও জয়পুরের বাড়িতে হানাও দিয়েছিল।
নীরবের বাপ-ঠাকুর্দাও হিরে ব্যবসায়ী। তাঁর বড় হওয়া ‘হিরের রাজধানী’ বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরে। হোয়ার্টন বিজনেস স্কুলে থাকতেই পড়াশোনা ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। এখন এই প্রতারণার খবর সামনে আসতেই বিজয় মাল্যের সঙ্গে তাঁর তুলনা টানছেন অনেকে। মাল্যের মতো নীরবও ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ধার শোধ করবেন। সে জন্য না কি সংস্থা বেচতেও তৈরি।
আতসকাচে পিএনবি বিতর্ক
• মুম্বইয়ে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) ব্র্যাডি হাউস শাখায় ১৭৭ কোটি ডলারের (১১,৩৪৬ কোটি টাকা) বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ। স্টক এক্সচেঞ্জে জানাল ব্যাঙ্কই
• পিএনবি-র তরফে জোড়া অভিযোগ দায়ের সিবিআইয়ে
• একটি অভিযোগ কোটিপতি হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীর বিরুদ্ধে। অন্যটিতেও যুক্ত গয়না সংস্থা
নীরব কীর্তি
• নীরব মোদীর নকশা করা গয়নার নাম বিশ্ব জোড়া। ক্রেতার তালিকায় রয়েছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট, ঐশ্বর্যা রাই
• তাঁর গয়না নিয়মিত ওঠে ক্রিস্টিজ, সদ্বিজের নিলামেও
• সিবিআইয়ের অভিযোগ, ২০১১ সালে বিরাট অঙ্কের ঋণের গ্যারান্টি ব্যাঙ্ক অফিসারদের সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়ে নেন নীরব ও তাঁর সংস্থা
• সেই নথি দেখিয়ে ধার অন্যান্য ভারতীয় ব্যাঙ্কের বিদেশি শাখা থেকেও
• জানুয়ারিতে ফের একই কৌশলে নীরব ও তাঁর আত্মীয়দের সংস্থা ঋণ নিতে আসে পিএনবির কাছে। তখন নজরে আসে এই প্রতারণা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy