Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Nirmala Sitharaman

‘দৈবদুর্বিপাকে কম জিএসটি’, ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি নন নির্মলা

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে নির্মলা জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের পক্ষে জিএসটি ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয়।

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:৩৯
Share: Save:

করোনা অতিমারিকে ‘দৈবদুর্বিপাক’ (অ্যাক্ট অব গড) আখ্যা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর আশঙ্কা, এর ধাক্কায় অর্থনীতির সঙ্কোচন হতে পারে। কিন্তু রাজ্যের আয় কমে গিয়ে হাহাকার উঠলেও আজ মোদী সরকার জানিয়ে দিল, কেন্দ্রের পক্ষে অর্থ সাহায্য করা সম্ভব নয়। কারণ কেন্দ্রের নিজেরই টাকা নেই।

আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে নির্মলা জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের পক্ষে জিএসটি ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি মেটানো সম্ভব নয়। প্রত্যাশা মতো এ বছর ১৪ শতাংশ হারে রাজস্ব আয় না-বাড়লে, তার জন্য কোভিড-ও কারণ। এখন রাজ্যের সামনে দু’টি বিকল্প। জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ যে টাকা কেন্দ্র দিতে পারছে না, হয় সেটুকু তারা বাজার থেকে ধার করুক। অথবা জিএসটি থেকে যতখানি আয় কমেছে, তার পুরোটাই ধার করুক। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাজ্যগুলি বেশি পরিমাণ ধারের পথে হাঁটলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে রাজ্যকে ঋণ দিতে পারে।

২০১৭-র জুলাই থেকে জিএসটি চালুর সময় ঠিক হয়েছিল, রাজ্যগুলির রাজস্ব ১৪ শতাংশ হারে না-বাড়লে কেন্দ্র পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেবে। ২০২২-এর জুন পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য, শরীর ও পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারক পণ্যে জিএসটি অতিরিক্ত সেস বসানো হবে। সেই সেস বাবদ আয়ের তহবিল থেকেই ক্ষতিপূরণ মেটানো হবে। কেন্দ্রের এই প্রতিশ্রুতি সংবিধানেও ঢোকানো হয়। ‘দৈবদুর্বিপাক’-এ এর থেকে ছাড় পাওয়ার শর্ত আইনে রাখা হয়নি।

আরও পড়ুন: করোনার তৃতীয় ঢেউই চিন্তা

আরও পড়ুন: মুখ্য সচেতক জয়রাম, গগৈ নতুন দায়িত্বে

লকডাউনের আগে থেকেই কেন্দ্র সময়মতো জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটাচ্ছিল না। পরে এপ্রিল-মে, জুন-জুলাই, দুই কিস্তিতে মোট চার মাস রাজ্যগুলি ক্ষতিপূরণ পায়নি। মোট বকেয়া প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা।

বিরোধী অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে আজ বিজেপির অর্থমন্ত্রীরাও দাবি তোলেন, কেন্দ্র ধার করে ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিক। কেন্দ্র ঋণ নিলে সুদও কম লাগবে। কিন্তু নির্মলা জানান, অর্থ মন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলবে যাতে রাজ্যগুলি কম সুদে ধার পায়। একইসঙ্গে তিনি জানান, কেন্দ্রের প্রস্তাবে ঐকমত্য তৈরি হলেই বকেয়া জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়া হবে। বিরোধী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্র চাপ দিয়ে রাজি করানোর কৌশল নিচ্ছে।

জিএসটি-যুদ্ধ

রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের দাবি
• জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রের টাকা না-থাকলে ধার করে ক্ষতিপূরণ মেটাক।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর অবস্থান
• রাজ্যগুলি ধার করুক। কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে কম সুদে ঋণের বন্দোবস্ত করবে
• চলতি অর্থ বছরে রাজ্যগুলির আয় ৩ লক্ষ কোটি টাকা কম হবে। সেস তহবিল থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা মেটানো যাবে। বাকি ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে জিএসটি চালুর জন্য আয় কম ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বাকিটা কোভিডের জন্য। কারণ, জিএসটি বৃদ্ধির হার অন্তত ১০%।
• রাজ্যগুলি হয় ৯৭ হাজার কোটি টাকা ধার করুক বা পুরো ২.৩৫ লক্ষ কোটি টাকাই ধার করুক। ২০২২-এর পরেও সেস চালু রেখে
ওই ঋণ সুদে-আসলে শোধ করা হবে।

তবে অর্থ মন্ত্রকের প্রস্তাব, রাজ্য যে বাড়তি ধার করবে, তা সুদে-আসলে সেস থেকেই শোধ হবে। রাজ্যের বোঝা বাড়বে না। প্রয়োজনে সেসের হার বাড়ানো হবে বা আরও বেশি পণ্যের উপর সেস চাপবে। যার অর্থ, গাড়ি, নরম পানীয়, সিগারেট, তামাক, পানমশলা বা কয়লার উপরে জিএসটি-র অতিরিক্ত যে সেস চাপে, তা ২০২২-এর জুনের পরেও বহাল থাকবে। বিরোধীদের অভিযোগ, আখেরে আমজনতার বোঝাই বাড়বে।

বিরোধী অর্থমন্ত্রীদের অভিযোগ, আজ অর্থ মন্ত্রকের রাজস্বসচিব অজয় ভূষণ পাণ্ডে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত তুলে ধরে জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ মেটাতে কেন্দ্রের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। এত দিন জিএসটি পরিষদে সৌজন্যের আবহেই বৈঠক হত। পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত বাদল বলেন, ‘‘খুব একটা প্রীতিকর পরিবেশে এ দিনের বৈঠক হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আস্থার অভাব দেখা দিচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেলের মতও আগে রাজ্যকে জানানো হয়নি।’’

বৈঠকের আগেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নির্মলাকে চিঠি লিখে দাবি তোলেন, কেন্দ্র পেট্রল-ডিজেলের মতো অন্যান্য সেস থেকে একা যে টাকা আয় করছে, তা থেকে ক্ষতিপূরণ মেটাক। ছত্তীসগঢ়ের অর্থমন্ত্রী টি কে সিংহদেও বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিকে যদি নিজের ভরসাতেই থাকতে হয়, তা হলে আর জিএসটি পরিষদে থাকার দরকার কী?’’ বিজেপির অর্থমন্ত্রীরাও ঘরোয়া স্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিহারের অর্থমন্ত্রী বিজেপির সুশীল মোদী আগেই বলেছিলেন, ক্ষতিপূরণ মেটানো কেন্দ্রের নৈতিক দায়িত্ব।

ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যগুলি আরও তথ্য চাওয়ায় ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রের বিস্তারিত প্রস্তাব পাওয়ার পরে সাত দিনের মধ্যে তারা মতামত জানাবে। নির্মলা বলেন, ‘‘তার পরে আমাদের ফের জিএসটি পরিষদের বৈঠক ডেকে ফয়সালা করতে হবে।’’

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মত, রাজ্যগুলি বেশি ধার করলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে টাকা ছাপিয়ে রাজ্যের বন্ড কিনে নেওয়াই একমাত্র উপায়। লকডাউনের পরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও মোদী সরকার একই ভাবে আমজনতা থেকে ছোট-মাঝারি শিল্পকে সরাসরি অর্থ সাহায্যের পথে হাঁটেনি। সহজে ঋণ জুগিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল। জিএসটি-তেও কেন্দ্র সেই পথেঁ হাঁটছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman GST Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE