অর্থবর্ষের শুরুতে বাজার আতঙ্কে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে। তা দ্বিগুণ হল গত মাসে প্রথমে দেশীয় পণ্যে ২৫% আর শেষে আরও ২৫% (মোট ৫০%) শুল্ক চাপায়। সেপ্টেম্বরে চাপ আরও বাড়াতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়ার জন্য এইচ১বি ভিসার ফি। গত সপ্তাহে ১০০% শুল্ক বসানো হয়েছে আমেরিকায় রফতানি করা ওষুধে। সেখানে ভারতীয় ওষুধ সংস্থার রফতানিই সর্বাধিক, তাই উদ্বেগও বেশি। এই সব কারণে দেশে জিএসটি কমলেও, আশঙ্কা কাটাতে পারেনি শেয়ার বাজার। টানা ছ’টি লেনদেনে সেনসেক্স পড়েছে মোট ২৫৮৭ পয়েন্ট। স্বস্তি উড়েছে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নিকারীদেরও। অবস্থা কবে ভালর দিকে যাবে, বোঝা যাচ্ছে না।
আতঙ্ক অমূলক নয়। শুল্ক নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা না হলে সেখানে বহু পণ্যের রফতানি কমবে। বিপাকে পড়বে অনেক সংস্থা। বহু মানুষকাজ হারাতে পারেন। অন্য দিকে ভিসারখরচ ১ লক্ষ ডলারে (প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকা) পৌঁছনোয় সে দেশে কর্মরত একাংশকে ভারতে ফিরতে হতে পারে।আটকাতে পারে নতুনদের যাওয়া। কাজ ও আয় কমতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে। তাদের মধ্যে অনেকের শেয়ার দর গত ক’দিনে বিপুল পড়েছে। দাম নেমেছে বেশ কিছু ওষুধ সংস্থারও।
আমেরিকা সংক্রান্ত সমস্যা বাদ দিলে অবশ্য দেশের অর্থনীতি বেশ মজবুত। বাণিজ্য সমস্যা সত্ত্বেও জাতীয় আয় এই অর্থবর্ষে প্রায় ৬.৫% হতে পারে বলে মনে করছে দেশ-বিদেশের আর্থিক সংস্থাগুলি। আশা, ভাল বর্ষা, নিয়ন্ত্রণে থাকা মূল্যবৃদ্ধি, নিম্নমুখী সুদ, জিএসটি কমার মতো সদর্থক শর্তে ভর করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৈরি করা সমস্যা সামলানো যাবে। তা ছাড়া ভারত শুল্ক ও ভিসা ফি নিয়েও আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছে। এর সুফল মিললে সূচক বাড়বে। যে কারণে বিশেষজ্ঞদের বার্তা, এই পড়তি বাজার ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ।
জিএসটি সংস্কার অবশ্য প্রাণ ফিরিয়েছে গাড়ি শিল্পে। নতুন করের হার চালুর প্রথম দিনই (২২ সেপ্টেম্বর) গাড়ি বিক্রি ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু মারুতি-সুজ়ুকিরই প্রায় ৩০,০০০ বিকিয়েছে। ধারণা, টানা চার দিনে ৮০,০০০ ছুঁয়েছে। যা দুর্বল বাজারেও সংস্থাটির শেয়ার দরকে ঠেলে তুলেছে রেকর্ড উচ্চতায় (১৬,৩০৭ টাকা)।
এ দিকে, আজ বা কাল অক্টোবর-ডিসেম্বরের জন্য স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার জানাবে কেন্দ্র। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ১০০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছাঁটাই করায় ব্যাঙ্ক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি জমায় প্রায় ৮০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছে। তবু কমেনি স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ। সম্ভবত বিহারের আসন্ন নির্বাচনই কারণ। তাই এ বারও হয়তো তা কমবে না। তবে হাতে লগ্নিযোগ্য টাকা থাকলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢালা যেতে পারে। ব্যাঙ্ক জমায় এখন সর্বোচ্চ সুদ ৬.৬%। এনএসসি-তে ৭.৭%, পিপিএফে ৭.১%, পাঁচ বছরের মেয়াদি জমায় ৭.৫%। সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিম এবং সুকন্যা সমৃদ্ধিতে মিলছে ৮.২%। মাসিক আয় প্রকল্পে ৭.৪% এবং কিসান বিকাশ পত্রে ৭.৫%।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)