অবশেষে কাজ শুরু হচ্ছে ডেউচা-পাঁচামিতে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে উপরের স্তরে থাকা ব্যাসল্ট এবং ব্ল্যাকস্টোন উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। বুধবার বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার শিল্পোন্নয়নে ইতিবাচক অনুঘটকের ভূমিকা নেবে এই কোল ব্লক। এখানে কয়লা ও ব্যাসল্টের বিপুল ভান্ডার আছে। যে কোনও দিন এই কাজ শুরু করা যায়। পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি। কাল থেকেই এখানে কাজ শুরু হবে।” তাঁর দাবি, এই কয়লা খনি এ রাজ্যের শিল্পচরিত্র সম্পূর্ণ বদলে দেবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩৫,০০০ কোটি টাকা লগ্নির সম্ভাবনা বলে দাবি রাজ্যের।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো আজ থেকে এখানে কয়লার উপরের স্তরে থাকা ব্যাসল্ট উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী জানান এই প্রকল্পে জমিদাতাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাঁরা সেখানেই কাজ করবেন। সেই সঙ্গে জমিদাতাদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণও দিয়েছে সরকার। ফলে আর সমস্যা নেই। সেখানকার জমিদাতা থেকে সাধারণ মানুষ, সকলকেই ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বার্তা দিয়েছেন, খনি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার পোল্যান্ডের সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশ খনি ক্ষেত্রে এগিয়ে, তার মধ্যে প্যোলান্ড অন্যতম।
ডেউচায় কাজ শুরুর লক্ষ্যে গত জানুয়ারিতেই সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। বৈঠকের পর মুখ্যসচিব বলেন, ৩২৬ একর জমিতে খোলা মুখ খনির কাজ শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে উপরের স্তরে থাকা ব্যাসল্ট উত্তোলন করা হবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে খনিগর্ভেও কাজ চলবে। কারণ সরকারের মূল লক্ষ্য, যত দ্রুত সম্ভব এখানে জমে থাকা কয়লা উত্তোলিত করা। ডেউচাতে কাজ শুরুর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। তাঁদের মতে, সব বাধা কাটিয়ে কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেলে, তা নিঃসন্দেহে হবে রাজ্যের শিল্পায়নের জন্য ইতিবাচক নিদর্শন। সংশ্লিষ্ট সকলেই একমত, দেশ-বিদেশের শিল্প প্রতিনিধিদের সামনে বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে তা ঘোষণা করে কার্যত মাস্টারস্ট্রোক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, বীরভূম জেলার মহম্মদবাজারের ডেউচা-পাঁচামিতে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কথা। প্রস্তাবিত কয়লা খনি গড়তে মোট ৩৩৭০ একর জমি প্রয়োজন। তার মধ্যে ১০০০ একর সরকারি জমি আছে। বাকি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। প্রথম পর্যায়ে ঠিক হয়েছিল দু’টি পর্যায়ে খনি হবে। প্রথমে দেওয়ানগঞ্জ হরিণশিঙা, পরে ডেউচা-পাঁচামি খনি এলাকা। সে ভাবেই জমি কেনা শুরু হয়। পরে দু’টি এলাকাতেই সরকার নির্ধারিত দরে পর্যায়ক্রমে জমি কিনেছে। জমিদাতা পরিবার থেকে ১৪০০ জনের বেশি সদস্য সরকারি চাকরি পেয়েছেন। খনি গড়ার ‘নোডাল’ সংস্থা পিডিসিএল বা রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)