সাম্প্রতিক বাজেটে করবিহীন আয়ের ঊর্ধ্বসীমা বছরে ৭ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ লক্ষ টাকা করেছে কেন্দ্র। করের হার কমানো হয়েছে বিভিন্ন স্তরেও। কিন্তু এই পদক্ষেপের ফলে কি শুধু সাধারণ মধ্যবিত্ত উপকৃত হলেন? নাকি বেশি লাভ হল উচ্চ আয়ের পেশাদারদের? সোমবার রাজ্যসভায় পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এই প্রশ্ন তুলে ধরলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম। তাঁর আরও দাবি, এই কর ছাড়ে অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি হওয়া মুশকিল।
কেন্দ্র আগেই জানিয়েছিল, আয়কর ছাড়ের ফলে তাদের রাজস্ব কমবে ১ লক্ষ কোটি টাকা। প্রশ্ন উঠেছিল, সে ক্ষেত্রে ঠিক কত জনের কাছে এই পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পৌঁছবে। প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের (সিবিডিটি) শেষ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সংসদে চিদম্বরমের বক্তব্য, দেশের মাত্র ৩.২ কোটি মানুষ আয়কর দেন। রিটার্ন দাখিল করলেও বাকিদের রোজগার কর দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে করের বাইরে বেরিয়ে যেতে চলেছেন আরও ৮০-৮৫ লক্ষ। আর ২.৫ কোটি মানুষের করের দায় কমবে। তাঁরা কিন্তু শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি নন। রিটার্ন অনুযায়ী, এঁদের মধ্যে ২.২৭ লক্ষের বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকার উপরে। ২৬২ জনের ক্ষেত্রে তা ১০০ কোটির বেশি। ২৩ জন ৫০০ কোটি টাকার বেশি আয় করেন। ফলে কর ছাড়ের উপকার পৌঁছেছে বিত্তশালীদের কাছেও।
কেন্দ্রের প্রত্যাশা, কর ছাড়ের ফলে মানুষের হাতে যে উদ্বৃত্ত থাকবে তার সাহায্যে কেনাকাটা বাড়বে। গতি বাড়বে অর্থনীতির। চিদম্বরমের প্রশ্ন, ‘‘এই ১ লক্ষ কোটি টাকার একাংশও কি সঞ্চয়ের খাতে জমা পড়বে না? স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান অন্তত মনে করছেন, এর একটা অংশ ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আসবে। পারিবারিক ঋণ, বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষার মতো ক্ষেত্রেও কি খরচ হবে না একাংশ?’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা, দেশের জিডিপির বহর এখন ৩২৪ লক্ষ কোটি টাকা। ১ লক্ষ কোটি তার মাত্র ০.৩%। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনি কি সত্যিই মনে করছেন, এই অংশটুকু জিডিপিকে ঠেলে তুলতে সাহায্য করবে? মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে আমার পরামর্শ, তিনি যেন বৃদ্ধির একটি ইঞ্জিনের উপরে নির্ভর না করেন। রফতানি, মূলধনী ব্যয়ের দিকেও জোর দিতে হবে।’’ চিদম্বরমের আরও বক্তব্য, সরকারি খরচ এবং অনুদানের মতো খাত থেকে ছেঁটে কেন্দ্র রাজকোষ ঘাটতি কমাতে চাইছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)