এ বার কোপ কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)-এর সুদে।
সোমবার ইপিএফের কেন্দ্রীয় অছি পরিষদ চলতি ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের জন্য চার কোটিরও বেশি চাকরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ড জমার উপর সুদের হার এক ধাক্কায় আগের বছরের ৮.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.৬৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ (ইপিএফও)-র যুক্তি, চড়া হারে সুদ দিলে তাঁদের তহবিলে আগামী বছরের জন্য হাতে উদ্বৃত্ত সামান্যই থাকত। এ ছাড়া প্রত্যাশা মতোই স্থির হয়েছে ৫ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ তহবিল শেয়ার বাজারে খাটানো হবে।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় বেঙ্গালুরুতে বৈঠক শেষে বলেন, ‘‘ঐকমত্যের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধা
ন্ত নেওয়া হয়েছে। এই হারে সুদ মেটানোর পরে আমাদের হাতে উদ্বৃত্ত থাকবে ২৬৯ কোটি টাকা।’’ আইএনটিইউসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক সিংহ এবং ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক ব্রজেশ উপাধ্যায়ও পরিষদের বৈঠক শেষে সুদ কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, অর্থ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) এবং অন্যান্য স্বল্প সঞ্চয়ের উপর সুদ কমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইপিএফে সুদ কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছিল। প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরেই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমানো হয়েছে ২০১৬-’১৭ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের জন্য। তালিকায় পিপিএফ ছাড়াও রয়েছে কিসান বিকাশ পত্র, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, ইত্যাদি। তবে শ্রম মন্ত্রক ইপিএফে ৮.৮ শতাংশ সুদ ধরে রাখার পক্ষেই এর আগে দাবি তুলেছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর তারা সেই প্রস্তাবও দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়।
প্রসঙ্গত, গত বছর প্রথমে সুদ কমিয়ে ৮.৭% করলেও, বিরোধিতার জেরে তা ফের বাড়িয়ে ৮.৮% করতে বাধ্য হয়েছিল কেন্দ্র। এ বার সেই ধরনের ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই সুদ স্থির করতে চেয়েছিল শ্রম মন্ত্রক। কিন্তু এ দিন সুদ কমানোর পথেই হাঁটল অছি পরিষদ, এবং তা ঘোষণা করলেন শ্রমমন্ত্রীই। প্রসঙ্গত, শ্রমমন্ত্রীই অছি পরিষদের প্রধান। তিনি জানান, ‘‘পড়তি সুদের জমানায় এখনও ইপিএফের সুদই সর্বোচ্চ। কারণ, আমাদের মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রী কর্মীদের স্বার্থরক্ষায় বদ্ধপরিকর।’’ উল্লেখ্য, এখন পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফে সুদের হার বছরে ৮.১ শতাংশ, জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড বা জিপিএফে ৮ শতাংশ, ডাকঘর মেয়াদি জমায় তা শুরু ৭.১০ শতাংশ থেকে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষের জন্য ৮.৭ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এবং সেটা পিএফ কর্তৃপক্ষ বা ইপিএফও-র কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের ৮.৮ শতাংশ সুদ দেওয়ার সুপারিশ অগ্রাহ্য করে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই হস্তক্ষেপকেই ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন অছি পরিষদ সদস্যরা ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। কেন্দ্রের এই ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তকে জনবিরোধী তকমা দিয়েছিল ইউনিয়নগুলি। এ সবের জেরেই শেষ পর্যন্ত সুদ বাড়িয়ে ৮.৮ শতাংশ করেছিল কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, ২০১১-’১২ সালে পিএফ তহবিলে সুদ ছিল ৮.২৫ শতাংশ, ২০১২-’১৩ সালে ৮.৫ শতাংশ, ২০১৩-’১৪ ও ২০১৪-’১৫ সালে ৮.৭৫ শতাংশ।
অছি পরিষদ তহবিলে ঘাটতির কথা বললেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই পিএফ কর্তৃপক্ষের হাতে ৪১০ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০১৫-’১৬ সালে ৮.৮ শতাংশ হারে সুদ মেটানোর পরে ওই বাড়তি অর্থ তাদের হাতে রয়েছে। ইপিএফও সূত্রেই চলতি অর্থবর্ষের জন্য ৩৯,০৮৪ কোটি টাকার আয়ের আগাম হিসাবও দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রভিডেন্ট কমিশনার ভি পি জয় বলেন, ‘‘আগের বছর ১৬০০ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত হাতে ছিল। সেই কারণেই ৮.৮ শতাংশে সুদ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। এ বছর তা মাত্র ৪১০ কোটি টাকা।’’
আইএনটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি এবং অছি পরিষদের সদস্য রমেন পান্ডে অবশ্য বলেন, ‘‘অছি পরিষদে আমরা এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি। আমাদের সায় ছাড়াই এটি পাশ করানো হয়েছে।’’ রমেনবাবুর অভিযোগ, এর আগে অছি পরিষদ দাবি করেছিল, শেয়ারে লগ্নি করলে আয় বেশি হবে, যা দিয়ে কর্মীদের সুদ মেটাতে সুবিধা হবে। অথচ ৫% তহবিল শেয়ার বাজারে লগ্নি করার পরে এখন সুদ কমিয়ে দেওয়া হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy