Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কুবের উবাচ

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছো জানিয়ে আজকের লেখা শুরু করব। নতুন বছরে দেশে অর্থনীতির দিক থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০২
Share: Save:

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছো জানিয়ে আজকের লেখা শুরু করব। নতুন বছরে দেশে অর্থনীতির দিক থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে সেই মতো বদলাতে হবে আমাদের লগ্নি পরিকল্পনাও। তবে সে জন্য মূলমন্ত্র থেকে সরে গেলে চলবে না। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, লক্ষ্য স্থির করা এবং সেই অনুসারে লগ্নি— বছর শুরুতে এটাই হোক আর্থিক পরিকল্পনার পাখির চোখ।

বছরের গোড়াতেই আমরা আলোচনা করব কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে অশোকের প্রোফাইল নিয়ে। চাকরির সূত্রে তাঁকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয়। বাবা-মায়ের সঞ্চয় তাঁকে তহবিল তৈরির লক্ষ্যে কিছুটা হলেও এগিয়ে রেখেছে। তবে তাঁর প্রোফাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, তিনি সংসার চালানোর খরচ একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে রাখতে পেরেছেন। ফলে সামান্য হলেও লগ্নি করার বাড়তি রাস্তা খুলে গিয়েছে তাঁর সামনে। এই পদ্ধতি শেখার মতো। মোটের উপর তাঁর লগ্নি ঠিকই রয়েছে। তার মধ্যেও কিছু কিছু পরিবর্তন দরকার। তা নিয়েই এখানে কথা বলব।

বিমার সুরক্ষা

অশোক গত মার্চেই নিজের জন্য একটি বিমা কিনেছেন। যার জন্য এক বার ৩.৬৬ লক্ষ টাকা দিয়েছেন তিনি। প্রকল্পের বিমামূল্য প্রিমিয়ামের দশগুণ। এই একটি প্রকল্প বাদ দিলে তাঁর বাদবাকি প্রকল্পগুলি সাধারণ এনডাওমেন্ট এবং মানি-ব্যাক পলিসি। সব মিলিয়ে এই ধরনের তিনটি পলিসির বিমামূল্য ৬.২৫ লক্ষ টাকা। এই সব পলিসি থেকে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে প্রয়োজনের সময়ে তা খুব একটা কাজে আসে না।

পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হিসেবে তাঁর উচিত ২৫ বা ৩০ বছরের মেয়াদে নিজের জন্য ৫০ লক্ষের একটি টার্ম পলিসি করা। আর এনডাওমেন্ট পলিসিগুলির মধ্যে কোনটা বন্ধ করবেন, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন।

ঝুঁকি নিতে চাইলে

তাঁর বেশির ভাগ লগ্নিই স্থায়ী আমানত, এনপিএস, পিপিএফ, রেকারিং-এর মতো প্রকল্পে। তিনি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রাখছেন ঠিকই, তবে আগামী দিনে হয়তো একটু বেশি ঝুঁকি নিতে হতে পারে। অশোকের বয়স কম। তাই তহবিল বাড়াতে সরাসরি শেয়ার কেনার কথাও ভাবতে পারেন। তবে এ জন্য নিজেকে প্রস্তুত হতে হবে। করতে হবে পড়াশোনাও। দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার ধরে রাখতে পারলে মূল্যবৃদ্ধি ছাপিয়ে সঞ্চয় বাড়াতে তা সাহায্য করবে। আর যদি শেয়ারে সরাসরি লগ্নি করতে না-চান, তা হলে এসআইপি তো আছেই।

ব্যাঙ্কের বিকল্প

বুদ্ধিমানের মতো সুদ বেশি (৮.৫%) থাকার সময়েই ১০ বছরের রেকারিং করেছিলেন অশোক। ফলে এখন সুদ কমতে থাকলেও, আগামী কয়েক বছর তিনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। তবে রেকারিংয়ের মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। যদি তিনি তুলনায় সুরক্ষিত প্রকল্পই চান, তা হলে আমার মতে সেই সময়ে তাঁর উচিত রেকারিং থেকে পাওয়া টাকা ৩ বছরের বেশি মেয়াদের জন্য ঋণপত্র নির্ভর (ডেট) ফান্ডে এসআইপি করা। এ ক্ষেত্রে করেও বাড়তি সুবিধা পাবেন তিনি। মনে রাখতে হবে রেকারিং কিন্তু করযোগ্য।

তিনি ঠিকই ধরেছেন যে, সুদ কমে আসায় আগামী দিনে স্থায়ী আমানত থেকে তাঁর আয় কমবে। তার উপর রেকারিং-এর মতো ফিক্সড ডিপোজিটও করযোগ্য। ফলে এর বিকল্প হিসেবেও তিনি বাছতে পারেন ডেট ফান্ডকে। তবে যত দিন স্থায়ী আমানতের মেয়াদ শেষ না-হচ্ছে, তত দিন সেই টাকা তুলবেন না। তার পরে বরং ফান্ডের কথা ভাবুন।

অন্য ধাঁচের লগ্নির জন্য ভেবে দেখতে পারেন করমুক্ত সরকারি বন্ডের কথাও। এতে সুরক্ষা তুলনায় বেশি। করেও সুবিধা রয়েছে। আবার রিটার্নও মন্দ নয়।

পিপিএফ চালিয়ে যান

অবসর পর্যন্ত বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পিপিএফে রাখবেন বলে স্থির করেছেন তিনি। যা একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত। পিপিএফ করমুক্ত। তাই সুদ আগের চেয়ে কমলেও, মেয়াদ শেষে হাতে পাওয়া অর্থ স্থায়ী আমানত বা রেকারিংয়ের তুলনায় বেশি। ফলে ১৫ বছর হয়ে গেলে এই খাতে লগ্নি ৫ বছর করে বাড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেব।

এসআইপি-র খুঁটিনাটি

অশোক মোট আটটি ফান্ডে এসআইপি করেছেন ১,৫০০ টাকা করে। এর মধ্যে একটি ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ইএলএসএস)। পিপিএফের মাধ্যমেই ৮০সি ধারার করছাড়ের পুরো সুবিধা তিনি পাচ্ছেন। ফলে আবার নতুন করে কেন তিনি ইএলএসএস প্রকল্পে টাকা ঢালছেন, তা আমার বোধগম্য হল না। এতে বাধ্যতামূলক ভাবে ৩ বছর লগ্নি আটকে থাকে। অর্থাৎ প্রয়োজনের সময়ে এই প্রকল্প থেকে তিনি চাইলেই টাকা তুলতে পারবেন না।

আমরা ফান্ডে টাকা রাখি মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যুঝে তহবিল বাড়াতে। কিন্তু তা বলে শুধু টাকা রাখতে হবে বলেই রাখা নয়, ফান্ড বাছাইয়ের দিকেও নজর দিতে হবে। তাঁর আটটি ফান্ডের চারটিই ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি। তিনটি মিড-ক্যাপ ও একটি হাইব্রিড। একই ধরনের অনেকগুলি ফান্ডে টাকা না-রেখে, তা ছড়ানোর ব্যবস্থা করুন। না-হলে এক ধরনের ফান্ড খারাপ ফল দিতে শুরু করলে তিনি অসুবিধায় পড়বেন। সেই কারণেই ফান্ডের পারফরম্যান্স খতিয়ে দেখুন। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে প্রকল্প বদলান।

তবে হ্যাঁ, আগামী ১৫ বছর এস আই পি চালানোর যে পরিকল্পনা করেছেন, তা বজায় রাখুন। অবসরের সময় কাছে এলে ধাপে ধাপে লগ্নি কমান।

মেয়ের জন্য

অশোকের লগ্নি পদ্ধতি ঠিক পথেই এগোচ্ছে। ইতিমধ্যেই যে এসআইপি তিনি করেছেন, আগামী দিনে তা থেকেই মেয়ের উচ্চশিক্ষা বা বিয়ের খরচ জোগাড় করতে তাঁর অসুবিধা হবে না।

বাড়ি তৈরির লক্ষ্যে

২০২২ থেকে ’২৫ সালের মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তাঁর হাতে এখনও অনেকটাই সময় রয়েছে। ফলে ফান্ডের টাকা থেকেই ফ্ল্যাটের ডাউনপেমেন্ট জোগাড় করতে পারবেন। তবে তাঁকে বলব এ জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। বরং ভেবে-চিন্তে এগোন। ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে যেন অবসরের মুখে ঋণের বিশাল বোঝা ঘাড়ে চেপে না-বসে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাড়তি করছাড়

৮০সি ধারায় করছাড়ের পুরো সুবিধাই অশোক পান। সঙ্গে এনপিএসের মাধ্যমে বাড়তি করছাড়ের সুযোগ পাচ্ছেন। এর থেকে অতিরিক্ত কর ছাড় এখনই পাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বাস্থ্যবিমার অঙ্ক বাড়লে আয়কর আইনের ৮০ডি ধারায় অতিরিক্ত টাকা বাঁচাতে পারবেন। বছরে এ ভাবে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা বাঁচাতে পারবেন। সে জন্য ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমার অঙ্ক কমপক্ষে ১০ লক্ষে নিয়ে যেতে হবে। এখনই সম্ভব না-হলেও ধাপে ধাপে সেই পথে এগোন।

চাকরির পরেও পেনশনের সুবিধা রয়েছে অশোকের। তহবিল মন্দ জমেনি। ফলে সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে টাকাপয়সার দিক থেকে খুব একটা অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। তবে কয়েক বছর পর পর লগ্নি পরিকল্পনা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেব তাঁকে। নতুন বছরে শুভেচ্ছো রইল।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত) অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত

বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য লিখুন। ‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১। ই-মেল: bishoy@abp.in। ঠিকানা, ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Savings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE