Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Poverty

অভাবের নালিশ দারিদ্র দূর করার খাসমহলেই

বিশ্ব ব্যাঙ্ক-আইএমএফের বার্ষিক বসন্ত বৈঠক চলছে। ওয়াশিংটনে আয়োজিত ওই বৈঠকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দিতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

A photograph representing Poverty

বিভিন্ন দেশে দারিদ্র দূরীকরণের নানা কর্মসূচি নেয় বিশ্ব ব্যাঙ্ক। প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৪০
Share: Save:

বিভিন্ন দেশে দারিদ্র দূরীকরণের নানা কর্মসূচি নেয় বিশ্ব ব্যাঙ্ক। কিন্তু ওয়াশিংটনে তাদের সদর দফতরেই ১০ বছর ধরে খাবার পরিবেশনের কাজে যুক্ত চুক্তি ভিত্তিক কর্মী আন্দ্রে ব্লুঁ-র দাবি, তাঁর বেতন বেড়েছে মাত্র একবার, তা-ও নামমাত্র (৫০ সেন্টস)। কর্মীদের অভিযোগ, এমন অনেকে এই পরিষেবা দেয়, যাঁদের বেহাল আর্থিক দশা। ফলে নিজেদের অন্ন সংস্থানই কঠিন। বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখপাত্র ডেভিড থিজ়ের অবশ্য দাবি, ওই কর্মীদের প্রতি তাঁদের গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগ সংস্থা ও ইউনিয়নের আলোচনায় তাঁরা নেই। তবে অতিমারির সময়ে কর্মীরা যাতে নিজেদের প্রাপ্য অর্থ পান, তা নিশ্চিত করেছিল বিশ্ব ব্যাঙ্ক।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক-আইএমএফের বার্ষিক বসন্ত বৈঠক চলছে। ওয়াশিংটনে আয়োজিত ওই বৈঠকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দিতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। আলোচনায় উঠে আসছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির নানা সমস্যার কথা। যার অন্যতম পৃথিবী জুড়ে বাড়তে থাকা দারিদ্রের মোকাবিলা। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আগেই বার বার বলেছে, কোভিডকালে বেড়ে যাওয়া আর্থিক বৈষম্য বহু মানুষকে নতুন করে দারিদ্রের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। আন্দ্রে বলছেন, ‘‘ওরা (বিশ্ব ব্যাঙ্ক) মানুষকে সাহায্য করতে সর্বত্র যান। কিন্তু ওদের খাসমহলেই কয়েকশো কর্মী রয়েছেন, যাঁরা দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন।’’ তাই ওই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে আসা সারা বিশ্বের প্রতিনিধিদের সামনে নিজেদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবেন তাঁরা। সম্প্রতি এক তপ্ত দুপুরে এ নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্কের বাইরে লাল শার্ট পরা এবং বিক্ষোভরত ইউনিয়ন সদস্যদের সঙ্গে পা-ও মিলিয়েছিলেন তিনি।

কর্মী ইউনিয়নের নেতাদের দাবি, বিশ্ব ব্যাঙ্কে খাবার পরিবেশনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ কর্মী উত্তর আমেরিকার কম্পাস গোষ্ঠীর দ্বারা নিযুক্ত। কিন্তু তাঁরা যে সব সুবিধা পান, তা কোনও রকমে দৈনন্দিন জীবন কাটানোর মতো। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্ধ আমেরিকা-সহ গোটা দুনিয়া। সুদ বাড়িয়ে তাকে রুখতে গিয়ে অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এমন সমস্যা সর্বত্র। তবে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়, সেখানকার অন্দরমহল থেকে এই ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এলে কথা হবেই। সেটা সেই কর্মীদের দায়িত্ব বিশ্ব ব্যাঙ্কের না হলেও।

বিশ্ব ব্যাঙ্কে কর্মরত ১৫০ জন কম্পাস কর্মীর মধ্যে অন্যতম আন্দ্রের দাবি, কর্মজগতে এক দশক পরেও তাঁর ঘণ্টাপিছু দৈনিক মজুরি ১৮ ডলার (প্রায় ১৪৭৬ টাকা)। আইনগত ভাবে যা অনেক বেশি হওয়া উচিত। কারণ, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের খাবার পরিবেশনের কাজ করেন তাঁরা। আন্দ্রের কথায়, ‘‘আমার যদি মজুরি বাড়ে, তা হলে আপৎকালীন প্রয়োজনের তহবিল গড়তে পারব। ঠিক সময়ে বিল মেটাতে পারব।’’ আপাতত কর্মীরা বেশি মজুরি এবং উন্নত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন। তবে আন্দ্রের উল্লিখিত মজুরি নিয়েও বেঁধেছে বিতর্ক। প্রশাসনিক মহলের একাংশের দাবি, ওয়াশিংটন ডিসি-তে ন্যূনতম মজুরি ১৬.১০ ডলার। তার থেকে ওটা বেশি। আবার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির হিসাবে, ওয়াশিংটন ডিসি-তে সাধারণ ভাবে জীবনযাপনের মজুরির (লিভিং ওয়েজ) সূচক হওয়া উচিত প্রতি ঘণ্টায় ২২.১৫ ডলার। সুতরাং সেই অর্থে ১৮ ডলার কমই।

কর্মী সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ডি টেলর বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলে আর্থিক সাম্য রক্ষা এবং প্রতিটি দেশের দরিদ্র ৪০% মানুষের আয় বৃদ্ধিই তাদের লক্ষ্য। সেটা প্রথম আমেরিকায়, এখানকার খাবার পরিবেশনের পরিষেবায় নিযুক্ত কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান থেকেই শুরু হওয়া উচিত। তাঁরা রোজ কঠোর পরিশ্রম করেন। কিন্তু নিজেদের খরচ মেটাতে হিমশিম খান।’’ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনসের ডিরেক্টর অ্যালেক্স ক্যাম্পবেলের দাবি, বিশ্ব জুড়ে কর্মীদের বেহাল দশা। অথচ সে জন্য তাঁরা দায়ী নন। যদিও কম্পাস-এর মুখপাত্র লিজ়া ক্লেবন বলছেন, তাঁরা খোলা মনে আলোচনা করছেন। স্বচ্ছ চুক্তি রূপায়নের আশা। তবে তাঁর দাবি, কর্মীদের ভাল রাখার কথা ভাবার ক্ষেত্রে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে কম্পাসের। বর্তমান আলোচনা পর্বে অবশ্য আরও কিছু সংস্থা ও কেন্দ্রের কর্মীদের বিষয়টিও যুক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poverty causes of poverty world bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE